বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নওগাঁর রক্তদহ বিল: ইতিহাসের রক্তাক্ত স্মৃতি এখন পর্যটনের প্রাণকেন্দ্র

  • নওগাঁ প্রতিনিধি   
  • ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২২:৫৫

উত্তরের জেলা নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় অবস্থিত শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী রক্তদহ বিল পাখি ও পল্লী দিন দিন পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হচ্ছে। অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই অঞ্চলটি শুধু নওগাঁ নয়, সারাদেশের ভ্রমণপিপাসুদের নজর কাড়ছে।

নওগাঁ সদর থেকে অদূরেই অবস্থিত রাণীনগর উপজেলাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে পর্যটন সম্ভাবনাময় এক নতুন ক্ষেত্র। ইতিহাস, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটেছে রক্তদহ বিল এলাকায়। বিলের বুকে নির্মিত হয়েছে ঝুলন্ত সেতু, বসানো হয়েছে পাখিবান্ধব বৃক্ষ। আর এই বিলে অবস্থিত ‘কোছমুড়ি দরগাহ’ বছরের পর বছর বন্যার পানিতেও অক্ষত থাকে যা এলাকাবাসী ও পর্যটকদের কাছে এক রহস্যজনক আকর্ষণ।

ইতিহাস ও নামকরণের পেছনের গল্প:

রাণীনগর ও বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার মধ্যবর্তী এই রক্তদহ বিলের নামকরণ ইতিহাসভিত্তিক। ব্রিটিশ আমলে এখানে ব্রিটিশ বাহিনী ও ফকির মজনু শাহের অনুসারীদের মধ্যে এক ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। যুদ্ধের পর বিলে রক্তের প্রবাহ দেখে এলাকাবাসী একে ‘রক্তদহ’ নামে অভিহিত করে, যা আজও বহন করে ইতিহাসের স্মৃতি।

আধুনিকায়নের ছোঁয়ায় পর্যটন খাত:

পর্যটনবান্ধব রূপে রক্তদহ বিলকে গড়ে তুলতে নানামুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন। বিল খনন, পাড়ঘেঁষে চলাচলের রাস্তা নির্মাণ, নৌকা চলাচলের পথ সুগমকরণ, সংযোগ খালগুলো পুনঃখনন, পাখি পল্লীকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা এবং পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণসহ চলছে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড।

রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাকিবুল হাসান জানান, রাণীনগরের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ভিত্তি করে এই অঞ্চলকে একটি মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই নিরলসভাবে কাজ করছেন। সবার সহযোগিতায় ইতোমধ্যেই অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে, ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ:

পাখি পল্লী ঘিরে ইতোমধ্যে শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। সিংড়াডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় দোকানদার শাহিন ইসলাম বলেন, ‘রক্তদহ বিল ও পাখি পল্লী ঘিরে পর্যটন এলাকা গড়ে তোলার ফলে আমাদের জীবনে নতুন সম্ভাবনার সূচনা হয়েছে। পর্যটকদের আনাগোনা বাড়লে এখানকার অর্থনীতি আরও চাঙা হবে।’

পর্যটকদের অভিমত:

ঢাকা থেকে আগত পর্যটক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘মিডিয়ায় দেখে রক্তদহ বিল ও পাখি পল্লীর কথা জেনেছি। বর্ষার সময়ে বিলের পানির দৃশ্য, নৌকাভ্রমণ, গাছের ফাঁকে পাখির কিচিরমিচির এবং নিরিবিলি পরিবেশ মন ছুঁয়ে গেছে। সামান্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটলে এটি জাতীয় পর্যায়ের পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।’

স্থানীয় অভিমত ও প্রশাসনিক উদ্যোগ:

নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও গোনা গ্রামের বাসিন্দা প্রফেসর শরিফুল ইসলাম খান বলেন, ‘রাণীনগরে কোনো ভারী শিল্প-কারখানা না থাকায় পরিবেশ এখনো অনেকটাই অক্ষত। কিন্তু বর্তমানে যে পর্যটনমুখী কার্যক্রমগুলো চলছে, তা রাণীনগরকে পর্যটনের নতুন ঠিকানায় পরিণত করতে পারে। সরকারের সুদৃষ্টি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে এটি একটি জাতীয় সম্পদ হয়ে উঠবে।’

এদিকে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে চলছে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। রাণীনগর রেলগেট প্রশস্তকরণ, নওগাঁ-আত্রাই সড়ক প্রশস্তকরণ এবং বিল-সংলগ্ন অবকাঠামো উন্নয়নে নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকেও সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল।

ইতিহাস, প্রকৃতি ও মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় গড়ে উঠছে এক সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে রক্তদহ বিল ও পাখি পল্লী একদিন হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য।

এ বিভাগের আরো খবর