আমার ছেলের লাশ ফেরত চাই। আমার বুকের ধনকে আইনা দেন। ওরে ছাড়া আমি কি করে বাঁচব? বুক চাপরে কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ইরাক প্রবাসী নিহত আজাদ খান (৪৭) এর অসহায় মা।
নিহত আজাদ খান রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের হোসেন মন্ডল পাড়া গ্রামের ইয়াজ উদ্দিনের ছেলে। মাত্র তিন মাস আগে দালালের মাধ্যমে ইরাক গিয়ে তিনি মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের শিকার হন।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত তিন মাস আগে আজাদ ধারদেনা করে ইরাক যান। এক সপ্তাহ আগে ইরাকের বাগদাদ শহর থেকে সে নিখোঁজ হয়। এর মধ্যে তার কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে লিটন নামে অপর এক ইরাক প্রবাসী ফোন করে আজাদের পরিবারকে জানান, আজাদকে হত্যা করে ৩ টুকরো করে লাশ বস্তায় ভরে ময়লার ভাগারে ফেলে রাখা হয়। শহরের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ময়লা পরিস্কার করতে এসে লাশের দুর্গন্ধ পায়। এ সময় তারা বস্তার মুখ খুলে দেখে মানুষের লাশ। তখন তারা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ তাদের হেফাজতে নেয়।
আজাদের স্ত্রী ময়না বেগম জানান, স্বামীকে বিদেশ পাঠিয়ে আমাদের পরিবার একদম নিঃস্ব হয়ে গেছে। অনেক ধারদেনা করে আমার স্বামীকে বাবুলের মাধ্যমে ৩ মাস আগে ইরাকে পাঠাই। তার যে কাজ দেয়ার কথা ছিলো বাবুল তাকে সেই কাজ না দিয়ে অন্য একটি কাজে দেয়। আমার স্বামী বাবুলের সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করে। কিন্তু বাবুল তার কোনো ফোন ধরেনি। বাবুল তার ফোন ধরলে হয়তো আজ আমার স্বামীর এই করুন পরিনতি হতো না। আমি আমার স্বামীর হত্যার বিচার চাই।
এ বিষয়ে ইরাক থেকে মুঠোফোনে বাবু্ল জানান, আমি ওর যেখানে গিয়ে ছিলাম সেখান থেকে কুমিল্লার সোহাগ নামে একটি ছেলে তাকে নিয়ে অন্য জায়গায় একটি দোকানে কাজে দেয়। সেই দোকানের মালিক (কফিল) আজাদকে তার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে কয়েকদিন ধরে বাড়িঘরের ময়লা ও আশপাশ পরিস্কার করায়। এর মধ্যে আমি সোহাগকে ফোন করে আজাদের খবর জানতে চাই। সোহাগ আমাকে জানায়, আজাদ কফিলের বাসায় আছে। আজ শুনতে পাচ্ছি আজাদকে হত্যা করে লাশ তিন টুকরো করে ফেলা হয়েছে। আমরা ইরাকের বাংলাদেশ এম্বাসিতে বিচার দিয়েছি। অ্যাম্বাসির লোকজন সহ আমরা সেখানে যাচ্ছি। আজাদের লাশ বাগদাদের একটি মর্গে রাখা হয়েছে।
নিহত আজাদের শ্যালক জহরুল হক বাপ্পি মুঠোফোনে জানান, আজাদ আমার দুলাভাই (চাচাতো বোন জামাই)। আমি বাংলাদেশ দূতাবাস, ইরাক সচিবের সাথে কথা বলেছি, আজাদ ভাইকে মেরে ফেলে কয়েক টুকরো করা হয়েছে শতভাগ সত্য। মরদেহ ইরাকে মর্গে আছে। আগামী রবিবার আজাদের হত্যাকারী আসামী কফিলকে কাজুমিয়া আদালতে তোলা হবে। তিনি আরও জানান, আজাদ ভাইয়ের লাশ দেশে আনার চেষ্টা চলছে।