বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বুড়িচংয়ে ১৮ বছর ধরে টিউবওয়েলের হাতল ছাড়াই অনবরত পানি পড়ছে

  • মাহফুজ নান্টু, কুমিল্লা   
  • ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১৮:৩৬

বাংলাদেশ ভারতের সীমান্তবর্তী কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার ভবেরমূড়া গ্রামে পাক দরবার শরীফ নামে মাজার প্রাঙ্গণে একটি টিউবওয়েল দিয়ে ১৮ বছর ধরে পানি পড়ছে। কারো সাহায্য ছাড়া টিউবওয়েল দিয়ে পানি আসার ঘটনায় বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে কৌতুহলের শেষ নেই। সীমান্তবর্তী হওয়ায় পাশের দেশ ভারত থেকেও অনেক লোকজন আসেন টিউবওয়লের পানি দেখতে। এই পানি পান করলে মনের আশা পূরণ হবে, সে জন্য যাওয়ার সময় পানি নিয়ে যান অনেকে। এছাড়াও কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলার মানুষজন আসেন মাজারে।

মাজারটির বর্তমান খাদম মাওলানা কাজী দিদারুল হক জানান, এই মাজারে যিনি সমাহিত আছেন তিনি একজন পীর। তার নাম কাজী আবদুল আলী শাহ। সর্ম্পকে আমার দাদা হয়। এই মাজার আরেকজনকেও সমাহিত করা হয়েছে। তিনি পীর আবদুল আলী শাহের বাবা কাজী সাফাল উদ্দিন শাহ। বাংলাদশ ও ভারত মিলিয়ে পীর আবদুল আলী শাহের ভক্ত অনুসারীর সংখ্যা লক্ষাধিক। প্রতি বছর মাঘ মাসের পূর্নিমায় এই মাজারে ওরস হয়। সে সময় অনেক ভক্ত আসেন মাজার।

শতবর্ষী এই মাজারর সুপেয় পানির অভাব ছিল। মাজারের ভক্তরা পুকুর থেকে পানি পান করতো। বিশুদ্ধ না হওয়ায় এই পানি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুকিপূর্ণ ছিল। এই এলাকার অন্যরাও বিশুদ্ধ পানির বড় সমস্যায় ছিলেন।

আঠারা বছর আগে বুড়িচং উপজেলা প্রশাসনের সহয়তায় এই মাজার প্রাঙ্গণে একটি টিউবওয়েল স্থাপনের জন্য পাইপ বসনো হয়। তারপর আর টিউবওয়েলের হাতল লাগানোর দরকার হয়নি। পাইপ দিয় অনবরত পানি আসছে। সেই থেকে শুরু। এখনই একই রকমভাবে পানি পড়ছে।

ভারতের নজিরপুরা গ্রামের বাসিন্দা মো. শরীফুল হাসান বলেন, এই টিউবওয়েলের পানি দিয়ে ওজু গোসলসহ খাবার ও রান্নাবান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া বেশ কিছু জমির ফসলও ফলে এই টিউবওয়েলের পানি দিয়ে।

স্থানীয় বাসিন্দা দ্বীন ইসলাম জানান, দূরদুরান্ত থেকে অনেকেই আসেন এই মাজারে। তারা কৌতূহল নিয়ে দেখেন কিভাবে একটি টিউবওয়েল দিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি পড়ে। তবে চৈত্রমাসে পানি প্রবাহ কিছুটা কম থাকে।

এ বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নত্বত্ত বিভাগের সরকারি অধ্যাপক মুর্শেদ রায়হান জানান, পৃথিবীতে যা কিছু ঘটুক না কেন সেটি ব্যাখ্যাযোগ্য এবং প্রাকৃতিক যেকোনো ঘটনা বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। নলকূপ স্থাপনের জন্য পাইপ স্থাপনের পর অনবরত পানি নির্গমনের ভূতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা আছে এবং ভূ-গর্ভস্থ লেয়ারে গ্যাস থাকলে গ্যাসের চাপে অনবরত পানি বের হতে পারে। যেহেতু কুমিল্লায় গ্যাস কূপ আছে, সেহেতু পানি নির্গমনের স্থানেও ভূগর্ভে গ্যাস থাকতে পারে। বর্ষাকালে ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার উপরে থাকায় বেশি পানি বের হয়, চৈত্র মাস বা গ্রীস্মকালে পানির লেয়ার নিচে নেমে যাওয়ায় কম পানি নির্গত হয়। এ বিষয়ে একজন ভূতাত্ত্বিক আরও ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।

কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার জনস্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী তানভীর হাসান জানান, মাটির নিচে বিভিন্নস্তরে পানি জমা থাকে। সেখান থেকে পানি নির্গমনের সুযোগ পেলে পানি উপরে উঠবে। ভবেরমূড়ার নলকূপ দিয়ে পানি উঠার বিষয়টি এমন হতে পারে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হোসাইন মোহাম্মদ সায়েম বলেন, বাংলাদেশের মাটির অবকাঠামো কিছুটা জটিল প্রকৃতির। এখানে মাটির বিভিন্নস্তরে পানি ও গ্যাস জমা থাকে। সেখানে অনেক চাপ থাকে। এই গ্যাস বা পানি লিকেজের সুযোগ পেলে নির্গত হয়। তবে ভবেরমূড়া এলাকায় টিউবওয়েল দিয়ে যে পানি নির্গমণ হচ্ছে সেটা পরীক্ষা করে দেখা দরকার। পানিতে কোন ঘ্রাণ আছে কি না। এছাড়াও মাটির নিচেও গবেষণা করার দরকার মনে করছি। সেখানে কোথাও গ্যাসের চাপ বা অন্য কিছু রয়েছে কিনা।

এ বিভাগের আরো খবর