বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকাকে স্বাস্থ্য কৌশলে অন্তর্ভুক্তির আহ্বান

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ২২:১৬

বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর চিকিৎসায় ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকাকে জাতীয় ক্লিনিক্যাল নির্দেশনা ও স্বাস্থ্য কৌশলে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআর, বি যৌথভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিডিসি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের কারিগরি সহায়তায় ‘বাংলাদেশে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর চিকিৎসায় ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকার ভূমিকা: ভবিষ্যৎ পথ নির্দেশনা’ শীর্ষক কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা এই মতামত তুলে ধরেন। গত ১ ও ৪ সেপ্টেম্বর দুই দিনব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

কর্মশালায় জানানো হয়, মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জা বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় ৫ মিলিয়ন মানুষের গুরুতর অসুস্থতা এবং প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশে ১৯টি হাসপাতালে পরিচালিত সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের জুন মাসে হাসপাতালে জ্বর ও কাশির লক্ষণ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫৯ শতাংশই ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত ছিলেন, যা পূর্ববর্তী কয়েক বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।

বাংলাদেশে প্রতি বছর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কে (গ্রীষ্ম থেকে বর্ষা) ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী- ৬০ বছরের বেশি বয়সি প্রবীণ, ৫ বছরের নিচে শিশু, গর্ভবতী নারী, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী এবং ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, শ্বাসতন্ত্র ও কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে টিকা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। যাতে মৌসুম শুরু হওয়ার আগে সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর জন্য প্রতি বছর নিয়মিত ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা প্রদানকে সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে জোর দিলেও বাংলাদেশে এই টিকা গ্রহণের হার সচেতনতার অভাব, নীতি নির্ধারণের ঘাটতি এবং প্রক্রিয়াগত বিভিন্ন চ্যালঞ্জের কারণে এখনো অনেক কম।

কর্মশালার প্রথম দিনে ইন্টার্নাল মেডিসিন, শিশু, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ, কার্ডিওলজি, নেফ্রোলজি ও শ্বাসতন্ত্রবিষয়ক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আলোচনা করেন। তাদের লক্ষ্য ছিল ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর চিকিৎসায় ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকাদানকে নিয়মিত ক্লিনিক্যাল সেবার অন্তর্ভুক্ত করার কৌশল প্রণয়ন।

দ্বিতীয় দিনে আইইডিসিআরের পরিচালক প্রফেসর ডা. তাহমিনা শিরিন ২০০৭ সাল থেকে শুরু হওয়া হাসপাতালভিত্তিক ইনফ্লুয়েঞ্জা পর্যবেক্ষণের ফলাফল উপস্থাপন করেন।

তিনি জানান, জুন-জুলাই মাসে সংক্রমণ সর্বাধিক হয় এবং সময়মতো টিকা দিলে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর অসুস্থতা ও মৃত্যু উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেতে পারে।

তিনি বলেন, এই জনগোষ্ঠীর জন্য টিকাদান বাংলাদেশে অর্থনৈতিকভাবে কার্যকর এবং খরচ সাশ্রয়ী। প্রফেসর তাহমিনা শিরিন টিকা প্রদানের সময়ের ওপর জোর দিয়ে বলেন, মৌসুমের আগে সর্বাধিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে টিকা প্রদান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে কয়েকটি বড় প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে টিকার অপ্রাপ্যতা ও উচ্চ মূল্য, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা, সচেতনতার ঘাটতি, কোল্ড চেইন ও সংরক্ষণ সমস্যা এবং জাতীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক নীতিমালার অভাব। এসব প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলায় প্রস্তাবিত সুপারিশগুলো হলো- গবেষণার মাধ্যমে জাতীয় উপাত্ত প্রকাশ, টিকার সহজলভ্যতা বাড়ানো ও দাম কমানো, গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে সচেতনতা কর্মসূচি, বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক সমাজের মাধ্যমে প্রচারণা, এবং চিকিৎসার জাতীয় গাইডলাইনে ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকার অন্তর্ভুক্তি।

আইসিডিডিআর, বির গবেষক ডা. মো. জাকিউল হাসান জানান, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীরা সাধারণ মানুষের তুলনায় চারগুণ বেশি সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকেন। তবে তাদের মধ্যে টিকা গ্রহণের হার এখনো উদ্বেগজনকভাবে কম।

প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন প্রফেসর ডা. তাহমিনা শিরিন, ডা. ফেরদৌসী কাদরী, ডা. কে. জামান, প্রফেসর ডা. চৌধুরী আলী কাওসার এবং প্রফেসর ডা. ফারহাদ হোসেন। আলোচনার সঞ্চালনা করেন প্রফেসর ডা. মাহমুদুর রহমান ও ডা. উইলিয়াম ডেভিস।

প্যানেল আলোচকরা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকাদানকে জাতীয় ক্লিনিক্যাল গাইডলাইনে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে জোর দেন। তারা বলেন, টিকা সবসময় বিনা মূল্যে দিতে হবে- এটি ভবিষ্যতে টিকাদান কার্যক্রমকে টেকসই রাখতে প্রয়োজন। এছাড়া জনগণ ও চিকিৎসকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি, যাতে গ্রহণযোগ্যতা ও টিকা প্রদানের হার বৃদ্ধি পায়।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনস্বাস্থ্য উইংয়ের যুগ্ম সচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ ওসমানী এবং ইউএস সিডিসির কান্ট্রি ডিরেক্টর প্রফেসর ডা. দিমিত্রি প্রিবিলস্কি।

ডা. ওসমানী কর্মশালার সুপারিশগুলো মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দেন এবং জনস্বাস্থ্য কর্মসূচির মাধ্যমে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

প্রফেসর প্রিবিলস্কি বলেন, ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রাদুর্ভাব শনাক্তকরণ, সময়মতো অবহিতকরণ ও সরকারি-বেসরকারি খাতের সমন্বয় টিকা কার্যক্রম সফল করার মূল চাবিকাঠি।

এ বিভাগের আরো খবর