পার্বত্য চট্টগ্রামে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির গাছ সংরক্ষণে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে রাঙামাটি ঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগ। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম ঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগ ২০২৩ সালে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর অংশ হিসেবে রাঙামাটির কাউখালি উপজেলার খাসখালী রেঞ্জ এলাকায় ইতোমধ্যে বিলুপ্তপ্রায় ৩৬ প্রজাতির দূর্লভ গাছ নিয়ে একটি বাগান সৃজন করা হয়েছে। পাশাপাশি গড়ে তোলা হচ্ছে এসব গাছের বীজ ভাণ্ডার।
দেশের এক দশমাংশ ভূখণ্ড নিয়ে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম ছিলো শত শত বছরের দূর্লভ গাছপালার ভাণ্ডার। তবে দীর্ঘদিন ধরে অবহেলা ও নির্বিচারে বন উজাড়ের কারণে বিপন্ন হয়ে পড়েছে পাহাড়ের জীববৈচিত্র্য। এই বাস্তবতায় বন বিভাগের এ উদ্যোগকে বিশেষজ্ঞরা যুগান্তকারী বলছেন।
ঝুম নিয়ন্ত্রণ বনবিভাগের খাসখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল গফুর খান চৌধুরী বলেন,
‘এই বাগানটিকে যদি সংরক্ষণ করতে পারি, ভবিষ্যতে এটি বন বিভাগের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। বিলুপ্তপ্রজাতির চারাগুলো আমরা বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম থেকে সংগ্রহ করেছি। এছাড়া বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মো. জাহিদুর রহমানও বিভিন্ন জায়গা থেকে চারা এনে বনায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন।’
মাত্র ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা এই বাগানে রয়েছে চিকররাশি, কাঠবাদাম, গুটগুটিয়া, অর্জুন, আমলকী, হরতকী, হিজল, ঢাকিজামসহ ১২ প্রজাতির বনজ গাছ, ১৪ প্রজাতির ঔষধি গাছ এবং ১০ প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ, যেগুলো শুধু জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণেই নয়, পাখিদের খাদ্য যোগানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এর পাশাপাশি বাগানে সংরক্ষিত হয়েছে আরও বেশ কিছু দুর্লভ প্রজাতির গাছ। এর মধ্যে রয়েছে—
লোহাকাঠ, চম্পাফুল, তেলসুর, সোনালু, ঢাকিজাম, রাধাচূড়া, কাঠবাদাম, জগা ডুমুর, বান্দর হোলা, শাল, উদাল, বকফুল, তমাল, খেজুর, বহেরা, সিভিট, ধারমারা, অশোক, কাঞ্চনভাদী, কৃষ্ণচূড়া, পিতরাজ, ছাতিয়ান, বোদ্ধ নারিকেল ও পলাশ।
রাঙামাটি ঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মো. তবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা ১০০ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় গাছের তালিকা তৈরি করেছি। এর মধ্যে ৩৬ প্রজাতির গাছ খাসখালী রেঞ্জে রোপণ করা হয়েছে। পাহাড়ের জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আশা করছি, এই বাগান সংরক্ষণের মাধ্যমে আমরা জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারব।’
এরই মধ্যে বাগান থেকে চারা বিক্রির কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। মাত্র ৭ টাকায় এখান থেকে সাধারণ মানুষ চারা সংগ্রহ করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন বন কর্মকর্তারা।
এ প্রসঙ্গে রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক শাওন ফরিদ বলেন, ‘অতীতে ঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগের মাধ্যমে ফরেস্ট অফিসের আশপাশে ও রাঙাপানি এলাকায় প্রচুর চারা উৎপাদন এবং স্বল্পমূল্যে সাধারণ মানুষের মাঝে বিতরণ করা হতো। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এ কার্যক্রম দেখা যাচ্ছিল না। বন বিভাগ যদি এখন বিলুপ্তপ্রায় বনজ, ঔষধি ও ফলদ বৃক্ষ সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই তাদের ধন্যবাদ জানাই।’
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বন বিভাগের এ উদ্যোগ পাহাড়ের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। পাশাপাশি পাহাড়ি অঞ্চলে বন সম্প্রসারণেও এর প্রভাব পড়বে ইতিবাচকভাবে।