দুই প্রবাসীর দেওয়া অর্থে নতুন ঘর পেল নওগাঁর রাণীনগরে সেই দুই অসহায় শিশু। উপজেলার কুজাইল হিন্দুপাড়া গ্রামের প্রীতম ও প্রিয়সী নামের দুই শিশু।
কাকার কাঁধে ভর করে স্বপ্ন দেখতে চায় প্রীতম ও প্রিয়সী দুই ভাই-বোন। এমন সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি নজরে আসে অনেকের। এরপর স্থানীয় কন্টেন্ট ক্রিয়েটর মতিন সরদার ও সাংবাদিক রায়হানের মাধ্যমে জানতে চায় রাজু এবং শেখ আলী নামের দুই সৌদি প্রবাসী।
সোমবার দুই প্রবাসীর অর্থে বানানো ঘর হস্তান্তর করা হয়। এ সময় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও স্থানীয প্রতিবেশীরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, ১১ বছরের ৭ম শ্রেণির প্রিতম ও ৭ বছরের ২য় শ্রেণির প্রিয়সী দুই ভাই-বোন। শিশু দুটির- মা মারা গেছে ৬ মাস আগে। বাবা কম বুদ্ধিসম্পন্ন হওয়ায় তেমন কাজ করতে পারে না। মা মারা যাওয়ায় অন্ধকার নেমে আসে তাদের জীবনে। সহায় সম্বলহীন দুই শিশুর থাকার ঘরের খুবই প্রয়োজন ছিল। পড়াশোনাও করতে চায়। হাল ধরে ডিগ্রি পাস কাকা পলাশ চন্দ্র প্রামাণিক। সেই কাকার কাঁধে ভর করেই স্বপ্ন দেখতে চায় তারা। কিন্তু কাকা পলাশের জীবনই চলে কোনোমতে, বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে গিয়ে সিঙ্গাড়া বিক্রি করে।
এমন বিষয় নিয়ে গত মাসে বিভিন্ন অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর নজরে আসে অনেকের।
এর মধ্যে স্থানীয় কন্টেন্ট ক্রিয়েটর মতিন সরদার এবং সাংবাদিক রায়হানের করা ভিডিওতে প্রিতম ও প্রিয়সী নামের অসহায় দুই শিশুকে নতুন ঘর করে দেওয়ার জন্যে আর্থিক সহায়তা কামনা করা হয়। ভিডিওটি কাশিমপুর ইউনিয়নের সৌদি আরব প্রবাসী রাজু এবং শেখ আলীর নজরে আসলে তারা দুইজন শিশু দুটির থাকার ঘরের সম্পূর্ণ খরচ বহন করে।
এদিকে ঘর তৈরি করতে সকল দায়িত্ব পালন করেছে মতিন সরদার ও রায়হান। অপরদিকে তাদের সাহস ও উৎসাহ দিয়েছেন সিনিয়র সাংবাদিক অধ্যক্ষ হারুনুর রশিদ ও সাইফুল ইসলাম।
নতুন ঘর পেয়ে খুবই খুশি প্রিতম ও প্রেয়সী দুই ভাই-বোন। যাদের সহযোগিতায় তারা মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছে তাদের সকলের প্রতি জানালেন ধন্যবাদ। এখন তাদের স্বপ্ন ও চাহিদা ভালোভাবে যেন পড়াশোনা করতে পারে। তাই চেয়েছেন সকলের দোয়া ও ভালোবাসা।
এ ব্যাপারে সাংবাদিক রায়হান বলেন, ‘কিছুদিন আগে সাংবাদিক বিকাশের করা একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানতে পারি দুটি অসহায় শিশুর করুণ কাহিনী। এরপর বিষয়টি কন্টেন্ট ক্রিয়েটর মতিন ভাইকে জানালে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। এরপর এই পর্যন্ত করতে পেরেছি।
কন্টেন্ট ক্রিয়েটর মতিন সরদার বলেন ‘আমি ও রায়হান সব সময় ভিডিওর মাধ্যমে গরিব ও অসহায় মানুষদের সাহায্য সহযোগিতার চেষ্টা করি। তারই ধারাবাহিকতায় প্রীতম ও প্রিয়সীর ভিডিও প্রকাশ করা হয়। ভিডিওটি সৌদি প্রবাসী রাজু এবং শেখ আলীর নজরে আসার পর আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং সঙ্গে সঙ্গেই নগদ ২৫ হাজার টাকা দেয়। আমার ভিডিওর কারণে যদি কেউ উপকৃত হয় তখন খুবই ভালো লাগে।
স্থানীয় সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম এমন কর্মকাণ্ডকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন ‘সমাজে যাদের সামর্থ্য আছে তাদের অবশ্যই উচিত অসহায়দের সাহায্য করা। সাহায্যকারী প্রবাসী দুই ভাইকেও বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে দুই শিশু যেন আগামী দিনগুলোতে ভালোভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে সেই জন্য তাদের জন্য স্থায়ী একটা আয়ের ব্যবস্থা করার জন্য উপজেলা প্রশাসনসহ সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান তিনি।
এ ধরনের জনসেবামূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো রাকিবুল হাসান। ওই দুই শিশুর বিষয়ে অবগত আছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হবে।