বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চবিতে দফায় দফায় সংঘর্ষ, আহত দেড় শতাধিক

  • চবি প্রতিনিধি   
  • ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১০:৫১

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মাঝে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত শনিবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া গতকাল রোববার পর্যন্ত এই সংঘর্ষে প্রায় ১৫০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌথ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হাটহাজারী উপজেলার নির্বাহী অফিসার ১৪৪ ধারা জারি করেছে।

এক অফিস আদেশে বলা হয়, যেহেতু অদ্য ৩১ আগস্ট ২০২৫ তারিখে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলাধীন ফতেপুর ইউনিয়নের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেট বাজারের পূর্ব সীমা থেকে পূর্বদিকে রেলগেইট পর্যন্ত রাস্তার উভয়পার্শ্বে সকাল আনুমানিক সাড়ে ১১টায় স্থানীয় জনসাধারণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরস্পর মুখোমুখি ও আক্রমণাত্মক হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং বর্তমানে পক্ষসমূহ আক্রমণাত্মক অবস্থায় রয়েছে।

সেহেতু, আমি মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আমার উপর অর্পিত ক্ষমতাবলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, জনসাধারণের জীবন, সম্পদ রক্ষা ও শান্তি শৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলাধীন ফতেপুর ইউনিয়নের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেট বাজারের পূর্ব সীমা থেকে পূর্বদিকে রেলগেইট পর্যন্ত রাস্তার উভয়পার্শ্বে অদ্য দুপুর ২টা থেকে ১ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ১৪৪ ধারার আদেশ জারি করলাম। ওই সময়ে উল্লিখিত এলাকায় সকল প্রকার সভা সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, গণজমায়েত, বিস্ফোরক দ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র ও সকল প্রকার দেশী অস্ত্র ইত্যাদি বহনসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় ৫ বা ততোধিক ব্যক্তির একত্রে অবস্থান কিংবা চলাফেরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করলাম। ১৪৪ ধারা জারির পর বিকাল ৪ টায় সংঘর্ষ এলাকায় যৌথবাহিনী অভিযান শুরু করে।

জানা গেছে, গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের এক নারী শিক্ষার্থী ২নং গেটসংলগ্ন এলাকায় রাত ১২টায় বাসায় ঢুকতে চাইলে দারোয়ানের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে দারোয়ান মেয়েটিকে মারধর করে। ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থীর নাম সাকিফা খাতুন। এরপর আশেপাশে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা তা দেখে এগিয়ে যায়। তখন সেই নারী শিক্ষার্থী তার এক ছেলে বন্ধুকে মুঠোফোনে ডেকে আনলে তাকেও লাঞ্চিত করা হয়। এসময় ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জড়ো হয়ে যায়। একপর্যায়ে স্থানীয়রা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

পরে স্থানীয় বাসিন্দারা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর জন্য লোকজন জড়ো করার ঘটনা ঘটে। এসময় ২ নং গেটসংলগ্ন বাচামিয়ার দোকানের সামনে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলে হামলা চালায় স্থানীয়রা। এতে অন্তত ৭০ জন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। যার মধ্যে ২৪ জন শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) পাঠানো হয়েছিল। পরে সারারাত ধরে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় অবস্থান করে। পরে রাত সাড়ে তিনটার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

এদিকে গতকাল রোববার সকাল এগারোটায় আবারও শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেইট সংলগ্ন এলাকায় ২য় দফায় সংঘর্ষ শুরু হয়। এই সংঘর্ষে প্রায় ৭০-৮০ জন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার তথ্য জানা গেছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ এবং উপাচার্যসহ আরও ১০ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

হামলায় আহতদের দাবি সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর টার্গেট করে আক্রমণ করা হয়েছে। যেটি পুঁজি করেছে স্থানীয় সন্ত্রাসী হানিফ গং। যারা গণঅভ্যুত্থানের কারণে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসার দখল হারিয়েছে। পুরো হামলায় ধারাল অস্ত্র, রাম দা, চাপাতি, ছুরি, বটি ও দা ব্যবহার ও সরবরাহ করেছে তাদের প্রশিক্ষিত লোকরা।

ঘটনার প্রেক্ষিতে উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, আমার ছাত্ররা আহত হয়েছে। প্রত্যেকটা ছাত্রকে তারা দা দিয়ে কোপিয়েছে। এটা কোন জগতে আছি আমরা। আপনারা আমাদের ছাত্রদের উদ্ধার করুন। আমাদের প্রক্টর, প্রো-ভিসি (অ্যাকাডেমিক) আহত, আমাদের প্রায় সব শিক্ষক-ছাত্র আহত। আমরা মেডিকেলে জায়গা দিতে পারছি না।

চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) বেলায়েত হোসেন জানান, বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৫১ জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। আরও অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি বলেন, হাসপাতালে নিয়ে আসা আহত শিক্ষার্থীদের কারও মাথায় জখম, কারও শরীর রক্তাক্ত, কেউ হাতে কিংবা শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত পেয়েছেন।

রোববারের সংঘর্ষের ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নির্মমভাবে কুপিয়ে আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুই ছাত্রকে ভবনের ছাদে কুপিয়ে সেখান থেকে ফেলে দেওয়া হয়। দুই ছাত্রের মধ্যে একজনের নাম রাজিউর রহমান রাজু। তিনি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, তবে বিভাগের নাম জানা যায়নি। আরেকজনের নাম জানা যায়নি। পরে কয়েক শিক্ষার্থী তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় আহতদের কথা বিবেচনায় নিয়ে রোববারের সব পরীক্ষা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। চবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলার ঘটনায় বহু শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেকের গতকাল রোববার পরীক্ষা ছিল। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

এদিকে চবি শিক্ষার্থীর সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনায় শিক্ষার্থীদেরকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দেওয়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য উদয় কুসুম বড়ুয়াকে বহিষ্কার করেছে দলটি। রোববার বিকেলে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে তাকে বহিষ্কারের তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ দলের নির্দেশনা অমান্য করে সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার জন্য গঠনতন্ত্রের বিধান মোতাবেক বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য উদয় কুসুম বড়ুয়াকে দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর আগে, রোববার সকালে চবির শিক্ষার্থীদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছিল তিনি।

এদিকে সংঘর্ষের ঘটনার তদন্ত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্র দল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। সন্ধ্যা ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেটে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি করেন।

অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী মোড়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এরপর জিরো পয়েন্টে এসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।

এ বিভাগের আরো খবর