গাজায় চলমান সামরিক অভিযান অবিলম্বে বন্ধ ও হামাসের হাতে আটক থাকা বাকি জিম্মিদের দ্রুত ফিরিয়ে আনার দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে বিক্ষোভকারীরা সমাবেশ করছেন। ওই দাবিতে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। খবর বিবিসির। এতে একদিকে যেমন রয়েছে জিম্মিদের পরিবার অন্যদিকে ইসরায়েলের সাধারণ মানুষও বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। দেশজুড়ে এই বিক্ষোভের আয়োজন করেছে হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিস ফোরাম নামের একটি গ্রুপ যারা অনেকদিন ধরেই জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টিতে সরকারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলে আসছে।তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন তিনি যুদ্ধবিরতি চুক্তি চূড়ান্ত করতে সহায়তা করেন এবং হামাসের হাতে আটক থাকা জিম্মিদেরকে মুক্ত করতে ভূমিকা রাখেন।ধারণা করা হচ্ছে, হামাস যাদেরকে জিম্মি করে নিয়ে গিয়েছিল তাদের মাঝে ২০ জন এখনো জীবিত আছেন। এদিকে ইসরায়েলের প্রধান প্রধান সড়ক অবরোধ করে এই বিক্ষোভ চলায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। দেশজুড়ে মহাসড়কগুলোতে এখন গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা যাচ্ছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।তেল আবিবের উত্তরে ইয়াকুম জংশনের কাছে কোস্টাল হাইওয়ে বা রুট টুতে বিক্ষোভকারীরা সড়কের মাঝখানে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ায় ওই মহাসড়ক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হাতে জিম্মি হওয়া মাতান জাঙ্গাউকারের মা আইনাভ জাঙ্গাউকার গতকাল মঙ্গলবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কড়া সমালোচনা করেছেন।তিনি বলেন, ৬৯০ দিন ধরে সরকার কোনো সুস্পষ্ট লক্ষ্য ছাড়াই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। আজ এটা পরিষ্কার যে নেতানিয়াহু একটি জিনিসকেই ভয় পান। আর তা হলো জনগণের চাপ। আমরা এই যুদ্ধ আরও এক বছর আগেই শেষ করতে পারতাম এবং সকল জিম্মি ও সেনাদেরকে ফিরিতে আনতে পারতাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে বারবার বেসামরিক মানুষদের বলি দেওয়ার পথ বেছে নিয়েছেন।ইসরায়েলজুড়ে এই প্রতিবাদটি এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি বিমান হামলা চলছে এবং ইসরায়েল সেখানে স্থল অভিযান চালানোরও প্রস্তুতি নিচ্ছে।এর আগে গতকাল দক্ষিণ গাজার একটি হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে পাঁচজন সাংবাদিক এবং চারজন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন।গাজায় একদিনে নিহত আরও ৮৬ ফিলিস্তিনিগাজায় ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর টানা হামলায় একদিনে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৮৬ জন ফিলিস্তিনি। গত রোববার সন্ধ্যা থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে আহত হয়েছেন আরও ৪৯২ জন। গত সোমবার রাতের দিকে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৫৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন ইসরায়েলি বাহিনীর নিক্ষিপ্ত গোলায়। বাকি ২৮ জন নিহত হয়েছেন খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে সেনাদের এলোপাতাড়ি গুলিতে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গত ‘সোমবার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাজার বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে ৮৬ জনের মরদেহ ও ৪৯২ জন আহতকে আনা হয়েছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা রয়েছেন, কিন্তু পর্যাপ্ত সরঞ্জাম ও জনবল না থাকায় উদ্ধার সম্ভব হচ্ছে না।’২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত সোমবারের পর পর্যন্ত গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ৭৪৪ জনে। আহত হয়েছেন আরও এক লাখ ৫৮ হাজার ২৫৯ জন ফিলিস্তিনি।এদিকে গত ১৯ জুন যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাস দুই মাসের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলেও ১৮ মার্চ সেই যুদ্ধবিরতি ভেঙে ফের গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। ওই সময় থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ মাসে নিহত হয়েছেন অন্তত ১০ হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন ৪৬ হাজার ২১৮ জন।গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত মে মাসের শেষ দিক থেকে ত্রাণ ও খাদ্য সংগ্রহ করতে যাওয়া সাধারণ মানুষদের ওপরও হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা। ২৭ মে প্রথমবারের মতো গাজায় ত্রাণ নিতে যাওয়া মানুষের ওপর গুলি চালানো হয়, এরপর থেকে নিয়মিতই এমন ঘটনা ঘটছে। এ সময়ের মধ্যে শুধু ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন ২ হাজার ১২৩ জন ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন আরও ১৫ হাজার ৬১৫ জনের বেশি।প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক সংগঠন হামাস ইসরায়েলের ভেতরে প্রবেশ করে অতর্কিত হামলা চালায়। সেই হামলায় অন্তত ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায় হামাসের যোদ্ধারা। এর জবাবে গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে আইডিএফ। টানা ১৫ মাসের বেশি সময় যুদ্ধ চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্রসহ মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর চাপে ইসরায়েল গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল।জিম্মি হওয়া ২৫১ জনের মধ্যে অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন এখনো জীবিত আছেন বলে ধারণা করছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। তাদের উদ্ধারে সামরিক অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছে আইডিএফ।জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মহল একাধিকবার গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে। এমনকি জাতিসংঘের আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে নেতানিয়াহু স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, হামাসকে পুরোপুরি দুর্বল ও অকার্যকর না করা এবং জিম্মিদের মুক্ত না করা পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ইসরায়েলে ব্যাপক বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ
এ বিভাগের আরো খবর/p>