বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জুলাইয়ে চক্ষুবিজ্ঞানে ভর্তি ১১ জন দুই চোখ, ৪৯৩ জন এক চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ২৬ আগস্ট, ২০২৫ ১২:২৪

রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত হয়ে চিরতরে দুই চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন ১১ জন। আর ৪৯৩ জন চিরতরে হারিয়েছেন এক চোখের দৃষ্টি।

গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ দেওয়া জবানবন্দিতে দৃষ্টি হারানোদের চোখে পিলেট ও বুলেট বিদ্ধ রোগীদের রক্তস্নাত ভয়াবহতার সাক্ষ্য দিলেন হাসপাতালটির রেটিনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক যাকিয়া সুলতানা।

বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষী হয়ে জবানবন্দি দেন ওই চিকিৎসক।

সাক্ষীর জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই থেকে আমাদের হাসপাতালে রোগী আসা শুরু করে। প্রথম দিন পাঁচজন রোগী পেয়েছিলাম যারা মেটালিক পিলেট ও বুলেট বিদ্ধ ছিল। ১৮ জুলাই ছিল রক্তস্নাত একদিন। সেদিন আনুমানিক ১০০ রোগী ভর্তি হয়েছিল। এর বাইরে আরও শতাধিক রোগীকে ওইদিন চিকিৎসা দেয়া হয়। ওইদিন দুপুরে আমি ইমার্জেন্সির সামনে এসে এক ভয়াবহ চিত্র দেখি। ১৪ থেকে ২৫ বছর বয়সি শতাধিক রোগীর একটা বড় অংশের কেউ এক চোখ, কেউ তাদের রক্তে ভাসা দুচোখ ধরে ছিলেন। তাদের চেহারা রক্তস্নাত ছিল।

সাক্ষীর জবানবন্দিতে ড. জাকিয়া সুলতানা নিলা বলেন, ১৮ জুলাই ১০ টি ওটি টেবিলে রাত ৯টা পর্যন্ত অপারেশন চলে। ১৯ জুলাই একই রকম চিত্র দেখতে পাই। অধিকাংশই মেটালিক পিলেট ও কেউ-কেউ বুলেট দ্বারা আহত ছিলেন। আহতের ধরনে ছিল কারো কর্নিয়া ছিদ্র, কারো চোখের সাদা অংশ ছিদ্র কিংবা কারো চোখ ফেটে যাওয়া অবস্থায় ছিলো।

২০২৪ সালের ৪, ৫,৬ আগস্ট অনেক বেশি রোগী রিসিভ করেন জানিয়ে এই চিকিৎসক তার জবানবন্দিতে বলেন, আমাদের হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে এক চোখে চিরতরে দৃষ্টি হারিয়েছেন এমন রোগীর সংখ্যা ৪৯৩ জন। দুই চোখে চিরতরে দৃষ্টি হারিয়েছেন এমন রোগীর সংখ্যা ১১ জন। দুই চোখে গুরুতর দৃষ্টি স্বল্পতায় ভুগছেন এমন রোগীর সংখ্যা ২৮ জন। আর এক চোখে গুরুতর দৃষ্টি স্বল্পতায় ভুগছেন এমন রোগীর সংখ্যা ৪৭ জন।

অধিকাংশ রোগী নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ওই সময় নিজের ডাক নাম ব্যাবহার করেছেন জানিয়ে এই চিকিৎসা বলেন, রোগীরা তাদের ভুল মোবাইল নম্বর ও আইডি কার্ড নাম্বার দিতো নিরাপত্তার কথা ভেবে বা কৌশল অবলম্বন করতে।

গতকাল ট্র্যাইব্যুনালে প্রসিকিউটসন পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এস এইচ তামিম। একসময় অপর প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে এই মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে জেরায় ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। এদিকে এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আজ সাক্ষ্য গ্রহণের সময় কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন। তার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। গতকাল পর্যন্ত এই মামলায় ১৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা শেষ হয়েছে।

এই মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, এর দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার কাজ চলছে।

এ বিভাগের আরো খবর