একমাত্র ছেলে নবীন সরদারের কবরটি নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন অসহায় বাবা খবির সরদার (৬৫)।
যে কারনে দিনরাতের অধিকাংশ সময় তিনি কবরের আশপাশ দিয়েই অতিবাহিত করেন।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সি বাজার এলাকায় ভাঙ্গনের মুখে থাকা পদ্মা নদীর পাড়ে ওই কবরটি অবস্হিত।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে সরেজমিন আলাপকালে খবির সরদার জানান, ১৫ বছর আগে নিজেদের মুদি দোকানে জেনারেটর বিস্ফোরণ হয়ে তার একমাত্র ছেলে মফিজের মৃত্যু হয়। বাড়ির কাছে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এখানে তার চাচা নবীন সরদার, চাচীসহ আরো কয়েকজনের কবর রয়েছে।
গত কয়েক বছরের ভাঙনে কবরটি একেবারে নদীর পাড়ে এসে পড়েছে। গত দুইদিন ধরে পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারনে এখানে আবারো ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনে তার সর্বশেষ সম্পদ সোয়া বিঘা ফসলি জমি নদীতে চলে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে তাদের পারিবারিক কবরস্হানটিসহ এখানাকার অনেক এলাকা নদীতে চলে যাবে। বিলীন হয়ে যাবে সামান্য দূরে থাকা তার সর্বশেষ আশ্রয়স্হল দুটি ছাপড়াঘর সহ ভিটেমাটি।
তিনি আক্ষেপ নিয়ে বলেন, বহু বছর ধরে এ এলাকায় নদী ভাঙছে। ভাঙনে শতশত মানুষ সর্বশান্ত হয়েছে। আমার বাপ-দাদার ১'শ বিঘা জমি ছিল। এখন কিছুই নেই। কিন্তু সরকার আমাদের রক্ষা করতে বিগত দিনে কোন ব্যবস্থাই নেয়নি।
এমতাবস্হায় দিশেহারা পদ্মা পাড়ের মানুষজন নিরাপদে সরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।। নির্ঘুম রাত কাটেছে তাদের।
আলাপকালে কাউয়ালজানি এলাকার শহিদুল ইসলাম মোল্লা জানান, দুইদিনের নদী ভাঙ্গনে তার প্রায় ১০ বিঘা জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। গত বছর যে জায়গায় কিছু জিও ব্যাগ ফেলানো হয়েছিল সে জায়গার পশ্চিমে ভাঙছে। ভাঙ্গন ঠেকাতে দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলানো দরকার।
লোকমান সরদার (৫৫) নামের অপর একজন জানান, মুন্সি পাড়া এলাকায় তার ১০ বিঘা ফসলি জমি ছিল। গত কয়েক বছরের ভাঙনে প্রায় ৮ বিঘা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। অবশিষ্ট ২ বিঘা জমি গত ২/৩ দিনে বিলীন হয়ে গেছে। আমরা ভাঙ্গন ঠেকাতে জরুরিভাবে জিও ব্যাগ ফেলানোর দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নাহিদুর রহমান জানান, উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের কাওয়ালজানি ও মুন্সি পাড়া এলাকায় ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এছাড়া ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে দৌলতদিয়া ইউনিয়নে অন্তর্গত দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরিঘাটগুলো। বিষয়টি প্রশাসনের উর্ধতন পর্যায়ে অবহিত করেছি। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বিআইডব্লিউটিএ কতৃপক্ষের সাথেও এ বিষয়টি নিয়ে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছি। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙ্গন প্রতিরোধে কাজ করা হবে।