বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শ্রমিক আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র বেলতলা এখন স্মৃতি চত্বর

  • সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি   
  • ১১ জুলাই, ২০২৫ ১৯:৫১

দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানা সৈয়দপুরের নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাস। ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত এই কারখানায় একসময় কাজ করতেন প্রায় ১৬ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। পাকিস্তান আমলেও এই কারখানা ছিল উত্তরের মানুষের অন্যতম কর্মসংস্থান, যেখানে তখনও ১০ হাজার ৫০০ জনের বেশি শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তা কর্মরত ছিলেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সেই সময় প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে দূর-দূরান্ত থেকে শ্রমিকরা সৈয়দপুর কারখানায় আসতেন। পার্বতীপুরসহ আশপাশের এলাকা থেকে শ্রমিকদের জন্য চলতো বিশেষ ‘সাটল ট্রেন’। শ্রমিকদের বসবাসের জন্য সৈয়দপুরের পাশের সংগলশী ইউনিয়নে অধিগ্রহণ করা হয় কয়েকশ একর জমি, যেখানে বর্তমানে গড়ে উঠেছে উত্তরা ইপিজেড।

শুধু কর্মস্থলই নয়, এই কারখানা ছিলো শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের অন্যতম শক্ত ঘাঁটি। ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলন থেকে শুরু করে পাকিস্তানি শাসক আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, এমনকি স্বাধীনতার পরও সরকার বিরোধী নানা আন্দোলনে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার শ্রমিকরা রেখেছে অগ্রণী ভূমিকা। আর এসব আন্দোলন-সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু ছিল রেলওয়ের ঐতিহাসিক বেলতলা।

সেই সময়ে রেলওয়ের প্রধান প্রবেশদ্বার সংলগ্ন বেলতলায় সকাল-বিকাল সমাবেশ হতো। হাজার হাজার শ্রমিক কর্মচারী যোগ দিতেন এসব জনসভায়। মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীসহ জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের পদচারণায় মুখর ছিল এই চত্বর। একসময় প্রশাসনও শ্রমিক আন্দোলনের তাপে সৈয়দপুরেই বসাতে বাধ্য হতো কার্যালয়।

কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই ঐতিহাসিক বেলতলা আজ আর আন্দোলনের চত্বরে নেই—পরিণত হয়েছে শুধুই স্মৃতিচারণের স্থানে। বেলতলায় আর নেই শ্রমিকদের ব্যানার, নেই হাজারো মানুষের গর্জন। সেখানে এখন শুধু ঘাস আর নিরবতা।

বর্তমানে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার হলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৮০০ জনের মতো। বছরের পর বছর নতুন নিয়োগ না হওয়ায় শ্রমিক সংকট প্রকট হচ্ছে। এক সময়কার ২২টি উপকারখানার মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ৯টি। যেখানে একসময় টুলরুম ও মেশিন সপে সাত হাজারের বেশি যন্ত্রাংশ উৎপাদিত হতো, সেগুলো এখন লোকাল মার্কেট থেকে কিনে আনতে হচ্ছে—যার ফলে কর্মকর্তাদের আর ঠিকাদারদের পকেটই মোটা হচ্ছে বলে অভিযোগ শ্রমিকদের।

শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা বলছেন, একসময় সক্রিয় ট্রেড ইউনিয়ন থাকায় কর্মকর্তারা শ্রমিক স্বার্থের বিরোধিতা করতে সাহস পেতেন না। অথচ এখন কার্যকর আন্দোলন না থাকায় সবকিছুই হচ্ছে আমলাদের ইচ্ছেমতো।

বাংলাদেশ রেল শ্রমিক ইউনিয়ন কারখানা শাখার সভাপতি প্রবীণ শ্রমিক নেতা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে স্থানীয় রেলওয়ে শ্রমিক লীগের বাধায় আমরা বিরোধী ট্রেড ইউনিয়ন নেতারা বেলতলায় কোনো মিটিং-মিছিল করতে পারিনি।’

জাতীয়তাবাদী রেলওয়ে শ্রমিক কর্মচারী দল ওপেন লাইন শাখার যুগ্ম সম্পাদক মো. দুলাল প্রামানিক বলেন, ‘একনায়ক হাসিনার পদলেহনকারী রেল শ্রমিক লীগের বাধার কারণে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়ের সুযোগই মেলেনি। তবে এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে চলেছে।’

জাতীয়তাবাদী রেল শ্রমিক ও কর্মচারী দল কারখানা শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ বলেন, ‘দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর ধরে স্থানীয় শ্রমিক লীগের নেতারা বিরোধী শ্রমিক সংগঠনকে বেলতলায় দাঁড়াতে দেয়নি। সভার ব্যানার ছিঁড়ে, মাইক কেড়ে নিয়ে মারধরও করেছে। ফলে আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র বেলতলা এখন স্মৃতি চত্বরে পরিণত হয়েছে।’

তবে শ্রমিক নেতাদের প্রত্যাশা, অচিরেই এই ঐতিহাসিক চত্বরে আবারও স্লোগানে মুখর হবে রেলশ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লড়াই।

এ বিভাগের আরো খবর