বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ৩ জুন, ২০২৫ ১৩:১৯

* ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও নতুন কর্মসংস্থান তৈরি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক সুরক্ষায় ভাতা ও উপকারভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ আকর্ষণে ব্যবসায় পরিবেশের উন্নয়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন।

জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার করে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বৈষম্যহীন ও টেকসই ভিত্তি নিশ্চিত করা এখন সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। গতকাল সোমবার বিকালে অর্থ উপদেষ্টা টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এই বাজেট পেশ করেন।

প্রথমবার বাজেট দিতে গিয়ে সালেহউদ্দিন আহমেদ চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ব্যয় কমিয়েছেন ৭ হাজার কোটি টাকা। স্বাধীনতার পর এই প্রথম বাজেটের আকার আগের অর্থবছরের চেয়ে কমল। বাস্তবতার সঙ্গে মিল রাখতেই ঘাটতি কমিয়ে বাজেটের আকার ছোটো রাখার কথা বলেছেন তিনি। উপদেষ্টা বলেছেন, আন্দোলনের ডামাডোলের মধ্যে নতুন বাজেটে স্বল্প আয়ের মানুষকে ‘স্বস্তি’ দেওয়ার চেষ্টার পরিকল্পনা থাকছে বাজেটে।

বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, দুস্থ ভাতা, প্রতিবন্ধীদের ভাতার মতো অনেক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু থাকছে; অল্প হলেও ‘বাড়বে’ ভাতার পরিমাণ ও সুবিধাভোগীর সংখ্যা। ‘জুলাই আন্দোলনে’ সম্পৃক্ত ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য বড় আকারে ব্যবস্থা থাকা ‘দরকার’ মনে করছে সরকার।

প্রস্তাবিত বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা জিডিপির ৯ শতাংশ। যার সংস্থান হবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস হতে ৬৫ হাজার কোটি টাকা । আর ঘাটতি বাজেটের প্রস্তাব করা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা।

এই ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা হবে ৩৯ হাজার কোটি টাকা। এতে নিট বৈদেশিক ঋণ দাঁড়াবে ৯৬ হাজার কোটি টাকা।

২০২৫-২৬ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ নেওয়া হবে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে নেওয়া হবে এক লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকবহির্ভূত ঋণ নেওয়া হবে ২১ হাজার কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার।

প্রস্তাবিত বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ এক লাখ কোটি টাকা। এছাড়া বৈদেশিক ঋণের সুদ ২২ হাজার কোটি টাকা।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৫.৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে, যা চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বা ৫.২৫ শতাংশ থেকে কিছুটা বেশি।

অর্থ উপদেষ্টা তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে এ লড়াইয়ের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে। ইতোমধ্যে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাময়িক হিসাবে ৩.৯৭ শতাংশ হয়েছে, যা চূড়ান্ত হিসাবে কিছুটা বাড়তে পারে। তবে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এটি বৃদ্ধি পাবে এবং মধ্যমেয়াদে ৬.৫ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আমরা আশা করছি।

সরকার আশা করছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রাক্কলিত (সংশোধিত) প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে। আর ২০২৬-২৭ অর্থবছরে তা ৬ শতাংশ এবং ২০২৭-২৮ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে।

গত বছর বাজেটের সময় ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ সরকার। তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছিলেন।

বাজেটে প্রথমবারের মতো যুব উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য ১০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া ‘তারুণ্যের উৎসব’ উদযাপনের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা।তিনি বলেন, তরুণ-যুবাদের দেশের উন্নয়নে আরও গভীরভাবে সম্পৃক্ত করার জন্য এই বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে সারা দেশে সফল যুব উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণের সিলিং বৃদ্ধি করে ৫ লাখ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করেছেন তিনি।

এর আগে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের অর্থ বিল অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও অন্যান্য উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন।

সংসদ না থাকায় আগামী ৩০ জুন রাষ্ট্রপতি বাজেট অধ্যাদেশে সই করবেন, ১ জুলাই কার্যকর হবে নতুন বাজেট। তবে বাজেটের অনেক অংশ, বিশেষ করে ট্যাক্স ও কাস্টমস সংক্রান্ত বিষয়গুলো উপস্থাপনের দিন (২ জুন) থেকেই কার্যকর হবে।

এর আগে সবশেষ সংসদের বাইরে বাজেট দেওয়া হয়েছিল ২০০৮ সালে। তখন ক্ষমতায় ছিল সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ওই বছরের ৯ জুন তখনকার অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম ২০০৮-০৯ অর্থবছরের জন্য ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন।

জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের হাল ধরা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের এটি প্রথম বাজেট।

এ বিভাগের আরো খবর