বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জলাবদ্ধতায় অচল সিলেট নগর

  • দেবাশীষ দেবু, সিলেট   
  • ১ জুন, ২০২৫ ১৬:৪১

অতিবৃষ্টির কারণে সিটি নগরের বিভিন্ন এলাকায় তীব্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে একটি বিশেষ জরুরি কন্ট্রোল রুম।

এদিকে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে দ্রুত বাড়ছে সুরমা কুশিয়ারাসহ সিলেটের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি। এতে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঢলে ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে সীমান্তবর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চলের সড়ক ও জনপদ।

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে গত কয়েক দিন ধরেই বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটে। নিম্নচাপ সরে গেলেও তার প্রভাবে বৃষ্টি এখনো অব্যাহত আছে। গত শুক্রবার সকাল থেকে গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।

এদিকে ভারী বৃষ্টিতে শুক্রবার রাত থেকেই সিলেট নগরের অনেক এলাকার বাড়িঘরে পানি ঢুকতে শুরু করে। তলিয়ে যায় সড়ক। শনিবার দুপুরে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অর্ধশতাধিক এলাকা জলমগ্ন ছিল।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভারী বৃষ্টিতে নগরীর জিন্দাবাজার, ক্বিন ব্রিজ এলাকা, আম্বরখানা, বন্দরবাজার, টিলাগড়, উপশহর, লালদীঘির পাড়, উপশহর, তেররতন, মাছিমপুর, তালতলা, শিবগঞ্জ, ছড়ারপাড়সহ বিভিন্ন জায়গায় হাঁটুপানি জমে যায়। অনেক বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।

সিসিক সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টির পানি দ্রুত অপসারণ ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য সিলেট সিটি করপোরেশন ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি (কক্ষ নং-২০৫) কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। সিসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবরকে জরুরি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করে চালু করা এই কন্ট্রোল রুমের সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান ও প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ একলিম আবদীন।

গতকাল সিসিকের এক অফিস আদেশে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করে পরিস্থিতি সরাসরি পরিদর্শন করবেন এবং তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

এ ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৫টার মধ্যে সব ওয়ার্ড থেকে জলাবদ্ধতা নিরসন ও পানি নিষ্কাশনের অগ্রগতির প্রতিবেদন সিসিকের আইসিটি শাখার ই-মেইলে (1gcc1@lgd.gov.bd) পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নগরের চৌহাট্টা এলাকার বাসিন্দা রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী জাকির আহমদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটু ভারী বৃষ্টি হলেই নগর পানিতে তলিয়ে যায়। বাসার ভেতর পানি ঢুকে অনেক আসবাবপত্র নষ্ট হয়। বছরের পর বছর ধরে এমন অবস্থা চলে আসছে।

সিসিকের কন্ট্রোল রুম চালুকে আইওয়াশ দাবি করে তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের নামে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সিসিক কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এতে কাজের চেয়ে লুটপাটই বেশি হয়েছে। তাদের লুটপাট আর অপরিকল্পিত কাজের কারণেই আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

বন্যার শঙ্কা: এদিকে সিলেটের পাশাপাশি উজানে ভারতের আসাম এবং মেঘালয়েও হচ্ছে ভারী বৃষ্টিপাত। এর পানিও নেমে আসছে। এ অবস্থায় সিলেটের নিম্নাঞ্চলের কিছু কিছু অংশ ডুবে গেছে। ফুঁসছে সুরমা-কুশিয়ারাও। তবে এই দুই নদীর পানি এখনো বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি।

গত কয়েক দিন ধরেই সিলেট অঞ্চলে বন্যার পূর্বাভাস দিয়ে যাচ্ছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে মোট ৪১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

আসাম ও মেঘালয়ের বৃষ্টির পানি দ্রুত নেমে আসে সুরমা কুশিয়ারা এবং সারি, সারিগোয়াইন, লোভাছাড়ার মতো পাহাড়ি নদী হয়ে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, জেলার প্রধান দুই নদী সুরমা, কুশিয়ারাসহ সব কটি নদ-নদীর পানি বাড়ছে। সারি-গোয়াইন ও ধলাই নদের পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার নিম্নাঞ্চলে দ্রুত পানি বাড়ছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলেও পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে। গোয়াইনঘাট উপজেলার পর্যটনকেন্দ্র জাফলং ও বিছনাকান্দি এবং কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব স্থানে পর্যটকদের ভ্রমণ করতে না যাওয়াটাই ভালো বলে স্থানীয় লোকজন পরামর্শ দিয়েছেন।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, পানি বৃদ্ধি পেলেও কারও পানিবন্দি অবস্থায় থাকার খবর পাওয়া যায়নি। স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছে; পাশাপাশি জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনা খাবারের মজুত রাখা হয়েছে।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারী জানান, উপজেলার গোয়াইনঘাট-রাধানগর সড়কের নিচু অংশের অংশবিশেষ প্লাবিত হয়েছে। তবে বৃষ্টি কমে গেলেই পানি নেমে যাবে। এখনো উপজেলার কোনো এলাকা প্লাবিত না হলেও তারা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় কিছু কিছু এলাকায় পানি বাড়ছে।

কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও আজিজুন্নাহার বলেন, গতকালের চেয়ে আজ পানি কিছুটা কমেছে। নিম্নাঞ্চলে পানি থাকলেও কোনো গ্রাম বা এলাকা প্লাবিত হয়নি। উপজেলায় ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো কারও আশ্রয় নেওয়ার প্রয়োজন পড়েনি।

এ বিভাগের আরো খবর