১৯৬৪ সালে রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান-২ নম্বরের ৭১ নং রোডের ১১৩, ১১বি (নতুন) বহুতল ভবনের ২ বিঘা জায়গাটিকে ৯৯ বছরের জন্য হস্তান্তর না করার শর্তে পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক প্রধান বিচারপতি ইমাম হোসেন চৌধুরীকে তৎকালীন ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট বরাদ্দ দেয়। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালের দিকে দুই হাত ঘুরে যথাক্রমে মজিবুর রহমান ভূইয়া ও শামসুন্নাহার বেগম থেকে সেই সম্পত্তি চলে যায় ইস্টার্ন হাউজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলামের কাছে।
২০২০ সালে টিউলিপ সিদ্দিকের আপন খালা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রভাব খাটিয়ে ইস্টার্ন হাউজিংকে লিগ্যাল পার্সোন হিসেবে অনুমোদন এবং ভবনের ৩৬টি ফ্ল্যাটের বিভাজনে তৎকালীন রাজউক সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে অনুমোদন করিয়ে নেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, উল্লিখিত সম্পত্তি হস্তান্তরযোগ্য করার মধ্যদিয়ে টিউলিপ ভবনটির ২০১ নম্বর ফ্ল্যাটটি ইস্টার্ন হাউজিং থেকে গ্রহণ করেন।
এই ঘটনায় ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের পাশাপাশি রাজউকের সাবেক সহকারী আইন উপদেষ্টা শাহ মো. খসরুজ্জামান এবং সাবেক সহকারী আইন উপদেষ্টা-১ সরদার মোশারফ হোসেনকে আসামি করে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন সংস্থাটির উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ৯৯ বছরের জন্য উল্লিখিত সম্পত্তি যে লিজকৃত ছিল তা হস্তান্তরযোগ্য নয়। এই সম্পত্তি যখন হস্তান্তরযোগ্য হয়ে যায় সেখানেই অপরাধের বিষয়টি বোঝা যায়।’
দুদক জানিয়েছে, এই মামলায় তিন আসামি ছাড়াও মৃত্যুর কারণে তা থেকে গুরুত্বপূর্ণ দুই আসামিকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. নাসিমের ভাই রাজউকের সাবেক আইন উপদেষ্টা ড. মো. সেলিম ও ইস্টার্ন হাউজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে ইস্টার্ন হাউজিং থেকে বরাদ্দ নেন টিউলিপ সিদ্দিক। সেই ফ্ল্যাট ২০০২ সালে তাঁকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তবে ফ্ল্যাট প্রদানের বিপরীতে ইস্টার্ন হাউজিং ফ্ল্যাট কেনা বাবদ টাকা প্রদানের কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। দুদকের কাছে তাঁরা স্বীকারোক্তি দিয়েছেন এই ফ্ল্যাট বাবদ সর্বশেষ ২০২২ পর্যন্ত টাকা পরিশোধের তাগাদা দিলেও টিউলিপ টাকা প্রদান করেননি।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, অপরাধমূলক অসদাচরণ ও অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোনো টাকা পরিশোধ না করেই অবৈধ পারিতোষিক হিসাবে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়ে গুলশান-২ এর ফ্ল্যাট (ফ্ল্যাট নম্বর বি/২০১, বাড়ি নম্বর ৫এ ও ৫বি (পুরাতন), বর্তমানে-১১৩, ১১বি (নতুন), রোড নম্বর ৭১) দখল নিয়ে ও পরে রেজিস্ট্রি মূলে খতিয়ান গ্রহণ বা প্রদানের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২০বি/৪০৯/১৬১/১৬২/১৬৩/১৬৪/১৬৫(ক)/১০৯ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে।
বিষয়টি অনুসন্ধানে দুদকের উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলামের নেতৃত্ব সাত সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছিল। টিমের অপর সদস্যরা হলেন সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, মুবাশ্বিরা আতিয়া তমা, এস এম রাশেদুল হাসান, এ কে এম মর্তুজা আলী সাগর, মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ও উপসহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।
এর আগে গত ১০ মার্চ পূর্বাচলে ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেওয়ার প্রমাণ পাওয়ায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার পরিবারের সদস্য, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন এবং জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক আটটি অভিযোগপত্র বা চার্জশিট দিয়েছে সংস্থাটি। যা আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।