বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘মেইড ইন জিনজিরা’ ট্যাং, জুস, গ্লুকোজে সয়লাব রমজানের বাজার

  • ইউএনবি   
  • ৭ মার্চ, ২০২৫ ১৩:৫৪

ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে পবিত্র রমজান মাসে জিনজিরায় তৈরি নকল ট্যাং, জুস ও গ্লুকোজে এরই মধ্যে সয়লাব হয়ে গেছে বাজার। অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফার আশায় নকল ও ভেজাল খাদ্যসামগ্রী তৈরি করে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করছে।

ঢাকার উপকণ্ঠে কেরানীগঞ্জের জিনজিরার খ্যাতি বিশেষ কারণে। নকল পণ্য উৎপাদনে এ জায়গার জুড়ি মেলা ভার। গাড়ির যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে প্রসাধনী, নকল খাদ্যসামগ্রী—কী উৎপাদন হয় না সেখানে। স্থানটির এতই খ্যাতি যে, দেশে নকল কোনো পণ্য বোঝাতে ‘মেইড ইন জিনজিরা’ ট্যাগ লাগিয়ে দেন অনেকে।

ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে পবিত্র রমজান মাসে জিনজিরায় তৈরি নকল ট্যাং, জুস ও গ্লুকোজে এরই মধ্যে সয়লাব হয়ে গেছে বাজার। অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফার আশায় নকল ও ভেজাল খাদ্যসামগ্রী তৈরি করে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করছে।

মফস্বল পর্যায়ের গ্রাহকরা এসব নকল খাদ্যসামগ্রী কিনে প্রতারিত হচ্ছেন, পড়ছেন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।

চিকিৎসকদের মতে, এসব ভেজাল পণ্য পাকস্থলি ও ফুসফুসে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। তবে স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি জেনেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো তৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে না।

ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার জিনজিরা, মান্দাইল, আমিরাবাগ, বোরহানিবাগ, শুভঢ্যা, আগানগর, কালীগঞ্জ ও কাজিরগাঁও এলাকায় রমজান মাসে সৃষ্ট চাহিদার কথা মাথায় রেখে নকল ও ভেজাল অরেঞ্জ ও ম্যাংগো ড্রিংকস পাউডার (ট্যাং) এবং বিভিন্ন নামী কোম্পানির মোড়ক নকল করে কিটক্যাট, মিমিসহ বিভিন্ন ধরনের চকলেট তৈরি ও বিক্রি চলছে দেদারসে।

বিগত সময়ে র‌্যাবের পক্ষ থেকে বারবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করায় এসব ভেজাল খাদ্য উৎপাদন কারখানা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর র‌্যাবের পক্ষ থেকে ভেজালবিরোধী তৎপরতা একেবারেই নেই। এ সুযোগে আসাধু ব্যবসায়ীরা আবার জেগে উঠেছে নতুন রূপে।

সরেজমিনে উপজেলার গদাবাগ, মুক্তিরবাগ, আমিরাবাগ, নেকরোজবাগ, খোলামোড়া, জিয়ানগর ও তেঘরিয়া, শুভঢ্যা, আগানগর, কালীগঞ্জ, কাজিরগাঁও ও আবদুল্লাহপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ভেজাল ও নকল শিশুখাদ্য তৈরি করে অতি চতুরতার সঙ্গে সেসব বাজারজাতকরণের প্রক্রিয়া চলছে।

মুক্তিরবাগ এলাকায় একটি কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন নারী শ্রমিক হাত দিয়েই বোতলে ভরছেন ভেজাল জুস। এ কাজে হাতে গ্লাভস পরার প্রয়োজনীয়তাও মনে আসেনি তাদের। মাথায় চুলের জাল (হেয়ারনেট) না পরেই অরেঞ্জ ড্রিংকস বোতলজাত করছেন তারা। আবার অরেঞ্জ ড্রিংকস পাউডার মোড়কজাত করার সময় বাতাসে তা যাতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে না যায়, সে জন্য ফ্যান বন্ধ করে কাজ করছেন শ্রমিকরা। এতে করে তারা ঘর্মাক্ত হয়ে যাচ্ছেন।

সেখানে কথা হয় কারখানাটির ম্যানেজার শাকিল আহমেদের সঙ্গে। তিনি জানান, তাদের বিএসটিআই ও পরিবেশ ছাড়পত্র আছে। তবে দেখতে চাইলে সেগুলো দেখাতে পারেননি তিনি।

ল্যাব আছে কি না জানতে চাইলে তিনি অকপটে ল্যাব না থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের কাছে রেসিপি আছে। সেই অনুযায়ী আমরা ড্রিংকস পাউডার প্রস্তুত করে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠাই। পরে আমাদের বিক্রয় প্রতিনিধি পণ্যগুলো বিভিন্ন দোকানে দোকানে বিক্রি করেন।’

ভেজাল ও কৃত্রিম রং মিশ্রিত অরেঞ্জ ড্রিংকস স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের আবহাওয়া খুবই ভালো। এখানে সবকিছুই হজম হয়ে যায়।

‌‘কয়েক বছর যাবত তো এই প্রোডাক্ট মার্কেটে বিক্রি করছি। কোথাও থেকে কখনও কোনো দুঃসংবাদ এখনও পাইনি।’

এসব ভেজাল খাদ্যসামগ্রী স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে জানিয়েছেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রোজিনা আমিন।

তিনি বলেন, ‘কৃত্রিম রংমিশ্রিত ভেজাল ড্রিংকস স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব ড্রিংকস সবচাইতে বেশি লিভার ও কিডনিকে আক্রান্ত করে এবং শরীরে ইনসুলিনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।’

এ চিকিৎসকের ভাষ্য, ‘ছোট শিশুদের জন্য এগুলো আরও বেশি ভয়াবহ। কারণ এতে চিনির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে।’

রমজান মাসে রোজাদারদের পানির চাহিদা পূরণ করতে জুস অপরিহার্য হলেও তা ঘরে বিভিন্ন দেশীয় ফল দিয়ে তৈরি করে পান করা উত্তম বলে পরামর্শ দেন তিনি।

কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর শাহিনুর রহমান বলেন, ‘অসাধু ব্যবসায়ীরা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে অবৈধ অরেঞ্জ ড্রিংকস পাউডার প্রস্তুত কারখানা তৈরি করেছে খবর পেয়েছি। এসব কারখানায় অভিযানের জন্য আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজন।

‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই আমরা অভিযানে নামব।’

কেরানীগঞ্জের ইউএনও রিনাত ফৌজিয়া বলেন, ‘ভেজাল খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত করা বড় ধরনের অপরাধ। আমরা দ্রুতই ভেজাল ও নকল সামগ্রী তৈরির প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করব।’

এ বিভাগের আরো খবর