চাঁদা না দেওয়ায় হকারকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে সিলেটের এক যুবদল নেতার বিরুদ্ধে।
এ অভিযোগ এনে শুক্রবার রাতে নগরের জিন্দাবাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন হকাররা।
এরপর শুক্রবার মধ্যরাতে অভিযুক্ত সিলেট মহানগর যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়দীপ চৌধুরী মাধবকে দল থেকে বহিষ্কার করে যুবদল।
ওই যুবদল নেতার বিরুদ্ধে চাঁদা না দেওয়ায় দুজন হকারকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ এনে শুক্রবার রাত ৯টা থেকে জিন্দাবাজার সড়ক অবরোধ করেন শতাধিক হকার।
খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে আসলেও বিষয়টি সুরাহা হয়নি। উল্টো পুলিশকে ধাওয়া দেন বিক্ষুব্ধ হকাররা। পরে পুলিশ সদস্যরা ওই এলাকা ছেড়ে যান।
আন্দোলনরত হকারদের অভিযোগ, যুবদল নেতা মাধব তাদের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। চাঁদা না দেওয়ায় ওই ব্যক্তি শুক্রবার দুজন হকারকে উঠিয়ে নিয়ে যান।
এদিকে অবরোধের ফলে জিন্দাবাজার, বন্দরবাজারসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। আটকা পড়ে শত শত যানবাহন। এর ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন মানুষ।
খবর পেয়ে রাত ১০টার দিকে সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী ঘটনাস্থলে ছুটে যান। ওই সময় তিনি বিষয়টি সমাধান করার আশ্বাস দিলে হকাররা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন।
তিনি বলেন, ‘যদি কেউ চাঁদাবাজি করে, তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই ব্যক্তি যুবদলের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে বহিষ্কার করা হবে।’
এরপর মধ্যরাতে অভিযুক্ত সিলেট মহানগর যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়দীপ চৌধুরীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। যুবদলের কেন্দ্রীয় সহদপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়ার সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বহিষ্কৃত নেতাদের কোনো ধরনের অপকর্মের দায়দায়িত্ব দল নেবে না। যুবদলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বহিষ্কৃত ব্যক্তির সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মাধবকে বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেট মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মির্জা সম্রাট হোসেন বলেন, যুবদল দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কোনো কর্মকাণ্ড বরদাশত করবে না।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জয়দীপ চৌধুরী মাধবের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
ঘটনার ব্যাপারে নিজের ফেসবুকে এই যুবদল নেতা লিখেন- ‘বেশ কিছু দিন থেকে আমার কাছে তথ্য ছিল যে ফুটপাত এর হকার দের থেকে আমার নাম ভাংগিয়ে কতিপয় ব্যাক্তি চাদা তুলে নেন, বিষয়টা আমি খতিয়ে দেখতে আমার ইউনিটের জুনিয়র ভাইদের নির্দেশ প্রদান করি। জুনিয়র দের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আমি নিশ্চিত হই যে, কতিপয় ব্যাক্তি ফুটপাতের হকার দের থেকে আমার নাম ভাংগিয়ে চাঁদা আদায় করে এবং যার এক বিশাল অংশ সিনিয়র দুই জন বিএনপি নেতার কাছে পৌছে যায় এবং লামাবাজারের দুই নেতাসহ বাকি অংশের টাকা ভাগাভাগি করে।’
মাধব আরও লিখেন, ‘সূত্রমতে আমার কাছে খবর আসে, আজকে (শুক্রবার) সন্ধ্যা আনুমানিক ৭ ঘটিকার দিকে এক ব্যক্তি ফুটপাতে অবস্থানরত মাথাপিছু সকল হকার হইতে ১০০ টাকা করে চাঁদা সংগ্রহ করেছ। নিশ্চিত হয়ে আজকে আমি আমার জুনিয়রদের তাকে হাতেনাতে ধরতে বলি এবং তাকে ধরার পরে নিশ্চিত হই যে, সে নিজে একজন হকার এবং বেশ কিছু হকার থেকে চাঁদা সংগ্রহ করে পুলের মুখের দিকে চাঁদা আদায় করছে।
‘আমার জুনিয়র নেতা-কর্মীরা তাকে হাতেনাতে চাঁদা আদায়কালে পাকড়াও করে এবং তার থেকে ১৭ হাজার ৮০০ টাকা পাওয়া যায়।’
মাধব আরও লিখেন, ‘আমার বক্তব্য না নিয়ে সেই নেতারা চাপ দিয়ে আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে চাঁদাবাজ রূপ দিয়ে বহিষ্কার করেন।’
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউল হক বলেন, এ ঘটনায় কোনো পক্ষই থানায় অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দেওয়া হলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।