বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় রাইডশেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম উবার ২০২৪ সালে বাংলাদেশে তাদের অর্থনৈতিক প্রভাববিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক ও বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীনের উপস্থিতিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি উন্মোচন করা হয়।
আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাবলিক ফার্স্ট পরিচালিত এ গবেষণায় উঠে এসেছে, ২০২৪ সালে উবার বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মোট ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সমমূল্যের অবদান রেখেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে উবার মটো ও অটো সার্ভিস বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ৯২০ কোটি টাকার সমপরিমাণ অবদান রেখেছে। শহরের ব্যস্ত জীবনে সহজ ও সাশ্রয়ী মূল্যের পরিবহন হিসেবে এ সার্ভিসগুলো অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। উবার ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের যাত্রীরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সময় সাশ্রয় করেছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, ৮২ শতাংশ যাত্রী অফিসে যাতায়াতের জন্য উবার ব্যবহার করেছেন। এতে প্রতি বছর আনুমানিক ১১ লাখ কর্মঘণ্টা সাশ্রয় হয়েছে, যা ৯৪ কোটি টাকার সমপরিমাণ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী উবারের অর্থনৈতিক অবদানের প্রধান দিকগুলো নিচে তুলে ধরা হলো।
উপার্জনের সুযোগ: উবার চালকরা তাদের অন্যান্য বিকল্প কর্মসংস্থানের তুলনায় ৪২% বেশি আয় করছেন।
স্থানীয় পর্যটনে ভূমিকা: ২০২৩ সালে উবার বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে অতিরিক্ত ২৯০ কোটি টাকা অবদান রেখেছে ও ২০২৪ সালে ২১ লাখ ৪০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।
ভোক্তা উপযোগিতা: ২০২৪ সালে উবারের মাধ্যমে বাংলাদেশের যাত্রীরা মোট ৬৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকার ভোক্তা উপযোগিতা লাভ করেছে।
কাজের সুযোগ: ৫০ শতাংশ চালক মনে করেন, উবার প্ল্যাটফর্ম না থাকলে তাদের জন্য কাজের সুযোগ কমে যেত।
প্রথম আয়: ৭৬ শতাংশ চালক বলেছেন যে, উবার তাদের প্রথম আয়ের প্ল্যাটফর্ম।সহজে যাতায়াত: ৮১ শতাংশ যাত্রী একমত হয়েছেন উবারের মাধ্যমে রাইড বুক করা রাস্তা থেকে গাড়ি নেওয়ার চেয়ে অনেক সহজ।
পরিবহন প্রযুক্তির উদ্ভাবন: ৮৬ শতাংশ যাত্রী উবার অ্যাপকে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবহন উদ্ভাবন হিসেবে মনে করেন।
নারীদের নিরাপত্তা: ৯৫ শতাংশ নারী যাত্রী বলেছেন, নিরাপত্তাই তাদের উবার ব্যবহারের অন্যতম প্রধান কারণ। ৮৯ শতাংশ যাত্রী উবারকে রাতে বাড়ি ফেরার সবচেয়ে নিরাপদ মাধ্যম বলে মনে করেন।
সহজ চলাচল: ৮৭ শতাংশ যাত্রী উবারের কারণে শহরে যাতায়াত সহজ হয়েছে বলে মনে করেন। ৭৮ শতাংশ যাত্রী বলেছেন, উবারের মতো রাইডশেয়ারিং সার্ভিস না থাকলে রাতে নিরাপদ যাতায়াত কঠিন হতো।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বিআরটিএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইয়াসিন বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই প্রেক্ষাপটে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা, কর্মসংস্থান তৈরি করা ও পর্যটন খাতকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে উবারের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
‘রাইডশেয়ারিং শিল্প, যার মধ্যে উবারও অন্তর্ভুক্ত, প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার করে পরিবহন খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রশংসনীয় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যা দেশের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে ইতিবাচক অবদান রাখছে।’
উবার বাংলাদেশের কান্ট্রি হেড নাশিদ ফেরদৌস কামাল বলেন, ‘২০২৪ অর্থনৈতিক প্রভাব প্রতিবেদনে উঠে এসেছে কীভাবে উবার দেশের পরিবহন ব্যবস্থাকে বদলে দিচ্ছে ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। আমরা আমাদের ইতিবাচক প্রভাব নিয়ে গর্বিত ও ভবিষ্যতে আরও উন্নত সেবা দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
এর আগে পাবলিক ফার্স্ট-এর টেক, মিডিয়া ও টেলিকম প্রধান এমি প্রাইস প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। প্রতিবেদন প্রকাশের পর নীতিনির্ধারক ও বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে একটি প্যানেল আলোচনার আয়োজন করা হয়।
প্যানেল সদস্যরা ছিলেন বিআরটিএর পরিচালক সীতাংশু শেখর বিশ্বাস, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, পিডব্লিউসি বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজিং পার্টনার শামস জামান ও উবার বাংলাদেশের কান্ট্রি হেড নাশিদ ফেরদৌস কামাল। সেখানে তারা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন।