অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রয়াত উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচার কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আজিজ আহমদ ভূঞা স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ গত ২০ ডিসেম্বর ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে আজ ২ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।’
অবকাশ, সরকারঘোষিত ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটি শেষে ১৪ দিন পর ২ জানুয়ারি থেকে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে নিয়মিত বিচারিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা ছিল, তবে ৫ জানুয়ারি থেকে ফিরবে নিয়মিত বিচারিক কার্যক্রম।
গত ২০ ডিসেম্বর বেলা ৩টা ১০ মিনিটে ৮৩ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে এ এফ হাসান আরিফ ইন্তেকাল করেন। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে, অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মী ও গুণগ্রাহী রেখে যান।
গত ২৩ ডিসেম্বর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরশায়িত হন এ এফ হাসান আরিফ।
তার মৃত্যুতে গত ২৩ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালন করা হয়।
রাষ্ট্রীয় শোক পালন উপলক্ষে দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে মসজিদে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে তার আত্মার মাগফিরাতের জন্য বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।
এর আগে ২১ ডিসেম্বর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় প্রিয় প্রাঙ্গণ সুপ্রিম কোর্ট থেকে থেকে এ এফ হাসান আরিফকে শেষ বিদায় জানান তার দীর্ঘ দিনের সহকর্মী, স্বজন শুভাকাঙ্ক্ষীরা। এ ছাড়াও আরও দুই দফা তার জানাজা হয়। তার সন্তান বিদেশ থেকে আসার পর ২৩ ডিসেম্বর তাকে দাফন করা হয়।
গত ৮ আগস্ট গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারে প্রথমে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছিলেন হাসান আরিফ। পরে তাকে ভূমি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়।
তিনি ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ থেকে ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা ছিলেন।
এ এফ হাসান আরিফ তার কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৬৭ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা হাইকোর্ট থেকে। এরপর ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন।
এ এফ হাসান আরিফ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এর আগে। এর মধ্যে রয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, গ্রামীণফোন বাংলাদেশ।
তিনি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ, নির্মাণ সালিশ, বাণিজ্যিক সালিশ, অর্থ, ব্যাংকিং এবং সিকিউরিটিজ বিষয়, করপোরেট, বাণিজ্যিক ও ট্যাক্সেশন বিষয়, সাংবিধানিক আইন বিষয়, পাবলিক আস্বাদন, আরবিট্রেশন এবং বিকল্প বিরোধ সমাধানের অন্যান্য পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছেন। তিনি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির কমপ্লেক্সেরও উপদেষ্টা ছিলেন।
এ এফ হাসান আরিফ ১৯৪১ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর স্নাতক এবং এলএলবি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।