সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪ এর খসড়াকে অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এ খসড়ায় বহুল বিতর্কিত সাইবার সিকিউরিটি আইনের প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি। এতে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।’
রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে মঙ্গলবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪ (খসড়া) পর্যালোচনা প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে টিআইবি।
বহুল বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া প্রস্তুত করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরই মধ্যে উপদেষ্টা পরিষদ কর্তৃক খসড়াটির অনুমোদনও দেয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সরকার আমাদের আশ্বস্ত করেছিল সবার সঙ্গে কথা বলে আইনটি প্রণয়ন করবে, কিন্তু কেন সেখান থেকে সরে এলো, বুঝতে পারলাম না। কেন তড়িঘড়ি করা হচ্ছে, তাও বোধগম্য নয়।
‘খসড়া আইনটিতে মতামত দেয়ার জন্য মাত্র ৩ দিন সময় দেওয়া হয়। আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া বিগত সরকারের কাজের প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি। আইনের অনেকগুলো ধারা আগের মতোই (সাইবার সিকিউরিটি আইন) রেখে দেয়া হয়েছে। আইনটি হয়রানির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে। আমরা চাই সবার মতামত নিয়ে আইনটি চূড়ান্ত করা হোক।’
তিনি বলেন, ‘গতকাল (৩০ ডিসেম্বর) রাতে আমাকে মেইল দিয়ে আজকে আইনটির বিষয়ে আলোচনার জন্য ডাকা হয়েছে। এটাও লোক দেখানো বলতে বাধ্য হচ্ছি। না হলে সন্ধ্যায় মেইল দিয়ে কেউ পরের দিন ডাকে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের বিষয়ে শাস্তির কথা বলা হয়েছে। আমরা এর বিপক্ষে না, তবে একইভাবে অসাম্প্রদায়িক চেতনার সুরক্ষা নিশ্চিত করা উচিত ছিল। খসড়ায় বিষয়টি অনুপস্থিত রয়েছে।’
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সাইবার সুরক্ষা আইনটির খসড়া উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন হওয়ার পরও কেন লুকোচুরি করা হচ্ছে? কেন এখন গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে? কেন ওয়েবসাইটে আপলোড করা হচ্ছে না?এই লুকোচুরি বড় প্রশ্ন তৈরি করছে।’
প্রফেসর এরশাদুল করিম মালয়েশিয়া থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে খসড়ার ওপর বিশ্লেষণ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এমন কোনো সমস্যার মুখোমুখি হয়নি যা বিশ্ব থেকে আলাদা। সারা বিশ্ব যে ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করছে, বাংলাদেশও তাই। তাহলে অন্যান্য উন্নত বিশ্বের থেকে কেন আরও কর্তৃত্ববাদী আইন করতে হবে?
‘আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি রাষ্ট্রের মর্যাদা ও সুনামের বিষয়টি ফুটে ওঠে আইনের মাধ্যমে। সেখানে সতর্কতার সঙ্গে আইনটি প্রণয়ন করা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘আইনটিতে এমন সব শব্দ যোগ করে দুর্বোধ্য করা হয়েছে, যার অনেক প্রতিশব্দ রয়েছে। আবার উপযুক্ত বাংলা থাকলেও ইংরেজি শব্দ যুক্ত করা হয়েছে। আমি আইনের শিক্ষক হয়েও আইনটির পাঠোদ্ধার করতে বেগ পেতে হয়েছে। আইনের দুর্বোধ্যতার কারণে এর অপপ্রয়োগ বাড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।’
তিনি আরও বলেন, “অধ্যাদেশের শিরোনাম দেয়া হয়েছে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৪’। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এখানে সাইবার সুরক্ষা শব্দগুলো ব্যবহার যথার্থ হবে না।
“এর নাম সাইবার বা কম্পিউটার অপরাধ অধ্যাদেশ হলে যথার্থ হবে। এতে ব্যবহৃত উপাত্ত-ভান্ডার শব্দটির যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে, তা অনাকাঙ্ক্ষিত ও বিভ্রান্তিকর।”