কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার বুরুদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা রুবেল। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এ ইউনিয়ন থেকে পরপর দুবার বড় ব্যবধানে জয়ী হয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি।
সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান রুবেল। তার এ গ্রেপ্তারের পর থেকেই বাবার অসুস্থতা বেড়ে যায়। এ অবস্থায় রোববার মৃত্যু হয় তার বাবার, কিন্তু প্যারোলে মুক্তি না পাওয়ায় বাবার জানাজায় অংশ নিতে পারেননি এ চেয়ারম্যান।
জেলগেটে শেষবারের মতো বাবার মরদেহ দেখতে পান রুবেল।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বুরুদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা রুবেল একটি রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ৩ নভেম্বর থেকে কারাগারে । ছেলের চিন্তায় থাকা বাবা জিয়াউদ্দিন হৃদরোগে আক্রান্ত হন। কিশোরগঞ্জে চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজধানীর নিউরো সায়েন্সেস হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে রোববার বিকেলে তার মৃত্যু হয়।
পরের দিন সোমবার আছরের নামাজের পর জানাজার সময় নির্ধারণ করে রুবেলকে প্যারোলে মুক্তির জন্য আইনজীবীর মাধ্যমে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর আবেদন করা হয়, কিন্তু প্যারোলে তাকে মুক্তি দেয়া হয়নি। এ অবস্থায় জেলগেটে মরদেহ দেখার অনুমতি প্রদান করেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।
আজ দুপুর ১২টার দিকে জেলগেটে মরদেহ আনা হয়। পরে জেলগেটেই শেষবারের মতো বাবাকে দেখতে পান রুবেল।
এদিকে জানাজায় অংশ নেয়ার সুযোগ দিতে প্যারোলে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় মুক্তি না দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা।
রুবেলের মা নূরজাহান বেগম বলেন, ‘রুবেলের চিন্তায় তার বাবা মারা গেল, কিন্তু রুবেলকে বাবার জানাজাটা পড়তে দেয়া হলো না। সারা জীবন এই আক্ষেপ থেকে যাবে।’
রুবেলের চাচাত ভাই মোফাসসেল হক জানান, রুবেল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দুইবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের কোনো পদে ছিলেন না তিনি। অথচ মিথ্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘চাচা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুধু রুবেলকে দেখতে চাইতেন। মিথ্যা সান্ত্বনা দিয়েছি এই বলে যে, রুবেল জামিনে এসে দেখে যাবেন, কিন্তু জীবিত অবস্থায় দেখা তো হলোই না, মৃত্যুর পর পিতার জানাজাটাও পড়তে পারলেন না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারের জেল সুপার রীতেশ চাকমা জানান, জেলগেটে বাবার মরদেহ দেখানো হয়েছে চেয়ারম্যান রুবেলকে। অন্য কোনো আনুষ্ঠানিকতা হয়নি।
কিশোরগঞ্জের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় জেলগেটে মরদেহ দেখার অনুমতি দেয়া হয়েছে।