অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, উচ্চ আদালতে ভালো বিচারক নিয়োগ দিতে হবে এবং এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এজন্য অবিলম্বে নিয়োগ-বিধির সংস্কার করা প্রয়োজন।
শনিবার রাজধানীর কলেজ রোডে বিচার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউশনের মিলনায়তনে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ পদ্ধতি সংস্কার নিয়ে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘বর্তমান নিয়োগ বিধি পদ্ধতি যথাযথভাবে কাজ করছে না। আদালতের মাধ্যমে নিপীড়ন-নির্যাতনের ক্ষেত্রে বিগত সময়ে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের বিধান সহায়তা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের সব নাগরিকের মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত মামলা উচ্চ আদালতের বিচারকরা শোনেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা ফাইনাল অ্যাপিলেট কোর্ট হিসেবে কাজ করেন, নন ফান্ডামেন্টাল বিষয়ে চাইলে তারা ব্যাখ্যা দিতে পারেন। এমনকি নিম্ন আদালতের তদারকি ক্ষমতা তাদের।
‘এই প্রতিষ্ঠানটি যদি নষ্ট করা যায়, তাহলে বাংলাদেশে যেকোনো দমনাত্মক সরকার এসে সব ধরনের মানবাধিকার দমন করার একটা অবাধ সুযোগ পেয়ে যায়। ঠিক এই কাজটাই গত ১৫ বছরে করা হয়েছে।
‘উচ্চ আদালত মানবাধিকার হরণ করার এবং মানুষকে নির্যাতন করার একটি হাতিয়ারে পরিণত হয়েছিল। দিনের পর দিন বিচার ছাড়াই জেলে আটকে রাখতে আপিল বিভাগ জামিনের শুনানি পিছিয়েছে।’
ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘শুধু উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনাচার হয় না, আপিল বিভাগে নিয়োগের ক্ষেত্রে অথবা প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে, কিংবা বেঞ্চ গঠনের ক্ষেত্রে অনাচার হয়- এটা আমরা আগে দেখেছি। প্রতিটি বিষয়কে আমরা নিয়ে আসার চেষ্টা করব।’
উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগ বিধির সংস্কার বিষয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের আগ্রহের বিষয়টি উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা খুবই ভাগ্যবান যে আমরা উদারমনস্ক একজনকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে পেয়েছি; যিনি এই সমস্যাগুলোর সমাধান করার জন্য আমাদের মতো সমানভাবে আগ্রহী।’
একইসঙ্গে ২৩ জন বিচারপতি নিয়োগের ঘটনাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে বার বার অভিযোগ আসছিল যে যারা বিচারকের পদে তখনও আসীন ছিলেন তারা একটি সুনির্দিষ্ট দলের প্রতি প্রচণ্ডভাবে অনুগত ছিলেন এবং তাদের অনেকেই অনেক অনাচার করেছেন। এমনকি ল ক্যু হওয়ারও আশঙ্কা ছিল। এ কারণে দ্রুততম সময়ে কাজ করতে আইনের জন্য আমরা অপেক্ষা করতে পারছিলাম না। হাতে সময় ছিল না কিন্তু করার ছিল অনেক কিছু। তাই তাদেরকে সেখানে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।’
উপস্থিত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আইন উপদেষ্টা যথাযথভাবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আদালতের বিচারক নিয়োগের পদ্ধতি সংস্কার করে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত, নিহত এবং রাজপথে নেমে আসা মানুষদের দাবি সফল করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ভার্চুয়াল মাধ্যমে সভায় যোগ দিয়ে বলেন, ‘বিচারপতি ও উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনীতির ব্যাপারে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। তবে দলীয় রাজনীতির মুখপাত্ররা যেন বিচারক হিসেবে নিয়োগ না পান সেটা নিশ্চিত করতে হবে। কাউন্সিল গঠনের সময় এ বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।’
উপস্থিত বক্তারা উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা, বয়সসহ যোগ্যতা এবং স্বচ্ছতার ওপর জোর দেন। দলীয়করণ কিংবা অসততার বিরুদ্ধে গিয়ে আইনগতভাবে বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়াকে তারা স্বাগত জানান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামীম হাসনাইন ও বিচারপতি শেখ মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহের, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সিনিয়র আইনজীবী ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক সিনিয়র অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল, বিশিষ্ট আইনজীবী এহসানুল হক সমাজি, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন আহমেদ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রিজওয়ানুল ইসলামসহ অনেকে।