জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, বিপ্লবের পর সুশীলতা দেখানো প্রাসঙ্গিক হতে পারে না।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবে জাতীয় নাগরিক কমিটির ঠাকুরগাঁও রাইজিং-এর মতবিনিময় সভা শুরুর আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি এ কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা দেখেছি ৪ আগস্ট নিজের অফিস (সচিবালয়) বাদ দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় তথাকথিত আমলা নামক যেসব দাস ও দালাল খুনি হাসিনার পক্ষে স্লোগান দিয়েছে তারা এখন সচিবালয়ে অফিস করে। তাহলে তাদের দ্বারা সচিবালয় কিভাবে নিরাপদ থাকবে?’
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের জায়গা থেকে যে জিনিসটা মনে করি, আমলাতন্ত্রে বিপ্লবীরা এবং সরকারে যারা আছে তারা তাদের জায়গা থেকে অনেক সুশীলতা দেখিয়েছে। বিপ্লবের পরবর্তীতে এগুলো (সুশীলতা) দেখানো যে কোনোভাবেই প্রাসঙ্গিক হতে পারে না তার প্রমাণ সচিবালয়ে আগুন।
‘আমরা আমাদের জায়গা থেকে মনে করি, বর্তমানে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, এই বিপ্লব ও অভ্যুত্থানের স্পিড ধারণ করে ওইভাবেই পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এখানে হয় সাদা না হয় কালো- মধ্যবর্তী কোনো জায়গা নেই।’
ব্যাখ্যা দিয়ে সারজিস আলম বলেন, ‘সচিবালয়ে যে আমলারা ছিলো এদের একটা বড় অংশ খুনি হাসিনাকে চেয়ারে বসিয়ে রেখেছিলো। এই অংশটা বিগত ১৬ বছরে সরকারের সব অপকর্মকে বৈধতা দিয়েছে। এই আমলাদের বড় অংশ বাংলাদেশের সরকারি অফিসগুলোতে খুনি হাসিনার পারিবারিক যে তন্ত্র সেটি চালিয়েছে।
‘আমরা আমাদের জায়গা থেকে মনে করি- সরকারি অফিস তো দলীয় অফিস ছিল না। কিন্তু দেখবেন প্রতিটি সরকারি অফিস রেফান্সের ভিত্তিতে, স্বজনপ্রীতির ভিত্তিতে, ক্ষমতার অপব্যবহারের ভিত্তিতে দলীয় অফিস হয়ে গিয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘যেসব আমলা বিগত বছরগুলোতে এই চেয়ারগুলোতে বসে মানুষের ওপর জুলুম করলো, নির্যাতন করলো তাদের যদি এখনও চেয়ারে বসিয়ে রাখেন…। ওই চেয়ারের যে দায়িত্ব, এই দায়িত্বের সঙ্গে দেশের হাজার হাজার মানুষের সেবা সম্পৃক্ত। তাহলে তো এই সেবা পাওয়া সম্ভব না এবং এই চেয়ারগুলোকে ব্যবহার করে সচিবালয়সহ দএশর বিভিন্ন স্থানে এখনও বিশৃঙ্খলা, অপকর্ম হচ্ছে। সঙ্গে বিভিন্ন দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন হচ্ছে।
প্রশ্ন তুলে সারজিস বলেন, ‘কিন্তু এগুলো হবে কেন? এতো বড় অভ্যুত্থানের পর তো এজেন্ডা বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ছিলো জনগণের, রাষ্ট্রের। কেন নির্দিষ্ট দলের বা গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন হবে?’
একটা স্ট্যান্ডার্ড সংস্কার করে নির্বাচন দিয়ে জনগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা জানিয়ে সারজিস বলেন, নির্বাচন যেন এত দীর্ঘ না হয়ে যায় যেটা দেশের পরিস্থিতিকে নাজুক পরিস্থিতিতে নিয়ে যায়- এটা যেমন সত্য, আবার ন্যূনতম সংস্কার না হয়ে যেন আগের মতো একটা প্রহসনের নির্বাচন না হয়ে যায়।
‘পাশাপাশি বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। খুব স্বাভাবিকভাবে তাদের গুছিয়ে নেয়াটা খুব সহজ হতে পারে। কিন্তু এর বাইরে আরও রাজনৈতিক দল আছে তাদের কথাগুলো আমাদের শুনতে হবে।’
সারজিস বলেন, ‘নির্বাচনের যে সময় বলা হয়েছে তা অভ্যুত্থানের পর দুই বছরেরও কম সময়। অভ্যুত্থান শেষে কোনো রাজনৈতিক দল কল্পনাও করেনি যে দুই বছরের মধ্যে একটি নির্বাচন হবে। তারা হয়তো একটু বেশি সময় ভেবেছিলো।
‘অভ্যুত্থানের সময় যদি বলা হতো যে নির্বাচন আয়োজনে দুই বছরের বেশি সময় লাগবে, তাহলে কোনো রাজনৈতিক দল তো দূরের কথা সিঙ্গে কোনো ব্যক্তিও দ্বিমত প্রকাশ করতো না। আমাদের ততটুকু সহনশীলতা থাকা দরকার। অভ্যুত্থানে এত রক্তের উপর দাঁড়িয়ে যে সরকারটি এসেছে তারা যেন একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারে এটা আমাদের সবার প্রত্যাশা।