গণমাধ্যমের সামনে নিজের সম্পদ বিবরণী প্রকাশ করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
রোববার বিকেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি নিজের সম্পদ বিবরণী তুলে ধরেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে আমার সম্পদ বিবরণী দুদক সংস্কার কমিশনের কাছে জমা দিয়েছি। অন্য কমিশনাররাও তাদের সম্পদ বিবরণী জমা দেবেন।’
নিজের সম্পত্তির বিবরণ তুলে ধরে আবদুল মোমেন বলেন, ‘বসিলায় সাড়ে ৭শ’ স্কয়ার ফিটের দুটি মিলিয়ে ১৫০০ স্কয়ার ফিটের একটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। সেখানে আরও প্রায় ৭০০ স্কয়ার ফিট নেয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি।
‘পূর্বাচল আমেরিকান সিটিতে স্ত্রীর সঙ্গে আমার একটি খালি জায়গা আছে ৫ কাঠা। আমি বিসিএস প্রশাসন কমিটির সদস্য ছিলাম। সেখানে ৮ জন সদস্যের জন্য ১০ কাঠা জমি রয়েছে। আমার ভাগে ১ দশমিক ২৫ কাঠা পড়বে।
‘২০০৭ সালে টাকা-পয়সা পেয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত দখল পাইনি। আমি নিজে রাজউকের একটি প্লটের জন্য ৭৫ হাজার টাকা জমা দিয়েছিলাম। আজ পর্যন্ত সেটির কোনো নিষ্পত্তি হয়নি। যে কোনো কারণে হোক সরকার আমাকে দেয়নি। আমি আবার আবেদন করব। এর বাইরে আমার আর কোনো স্থাবর সম্পদ নেই।’
অস্থাবর সম্পদের বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিভিন্ন আকারের ২৫টি সেলফ ভর্তি বইপত্র আছে। দেশি-বিদেশি বেশ দামি বইপত্র। আসবাবপত্র ইলেকট্রনিক সামগ্রী মিলিয়ে ৫ লাখ টাকার জিনিস আছে। ৫ বছর মেয়াদি ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র আছে। আর তিন মাস অন্তর সঞ্চয়পত্র আছে ২০ লাখ টাকার। আমার জিপিএফের টাকা তুলিনি, ওখানে ১৭ লাখ টাকা আছে।’
নিজের আয়ের উৎস সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমার চাকরিলব্ধ আয়, উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদের বিক্রয়লব্ধ অর্থ। শিক্ষকতা করি, বক্তৃতা করি, লেখালেখি করি। সাড়ে ৫ শতক একটা জমি কিনেছিলাম বেড়িবাঁধের বাইরে চটগড়ান বাড়ি এলাকায়। সেটি বিক্রি করে কিছু টাকা পেয়েছিলাম। আমার হাতে নগদ এবং ব্যাংক মিলিয়ে মোট সাড়ে ৪ লাখ টাকার মতো আছে।’
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সমমানের বেতন তিনি পান উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমার চাকরি জীবন অনেক দিনের। ছাত্রাবস্থা থেকেই আয় করা শুরু করি। যখন এই চাকরি থেকে চলে যাব তখন আপনারা হিসাব করবেন এই সম্পদ কতটা বাড়ল, কতটা কমল।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণপ্রত্যাশাকে লালন করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের সৌভাগ্য, আমরা এমন সময় এসেছি যখন রাজনৈতিক সরকার নেই। জনগণ এই সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে। এই সরকার প্রতিষ্ঠা না হলে, ৫ আগস্টের বিপ্লব না হলে আমরা এখানে আসতাম না।’
পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেনি যে, একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও বায়তুল মুকাররমের ইমাম পালিয়েছেন উল্লেখ করে আবদুল মোমেন বলেন, ‘এটি একটি অদ্ভুত ঘটনা। অনেক দেশেই আন্দোলন হয়েছে, রাষ্ট্রপ্রধান পালিয়ে গেছেন, প্রধানমন্ত্রী পালিয়ে গেছেন। কিন্তু পোপ বা মন্দিরের পুরোহিত পালিয়ে গেছেন, এমনটি ঘটেনি।
‘এরকম অবিশ্বাস্য ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে। রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। এ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে ভূমিকা রাখতে হবে।’
এ সময় দুদক কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেন, ‘মাত্র অর্ধেক জনবল নিয়ে দুদক কাজ করছে। আমরা নির্মোহভাবে অনুসন্ধান করব। কোথাও পক্ষপাত হবে না। আমরা জাতির কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহসান ফরিদ বলেন, ‘দুদকের পেশাগত ভিত্তি অনেক শক্ত। ৪২ দিন কমিশন না থাকার পরও দুদকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরলস কাজ করে গেছেন। পৃথিবীর কোনো মানুষের দাসত্ব করবে না দুদক।’
গত ১১ ডিসেম্বর কর্মস্থলে যোগ দেন মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। ওইদিন ৭ দিনের মধ্যে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ও আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করার কথা জানিয়েছিলেন তিনি।