শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় প্রিয় প্রাঙ্গণ সুপ্রিম কোর্ট থেকে শনিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল বিশিষ্ট আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফকে শেষ বিদায় জানিয়েছেন তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী, স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা।
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয় বেলা ১১টার দিকে।
জানাজায় অংশ নেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দীন, বর্ষীয়ান আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম ও ড. কামাল হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলামের পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, আইনজীবীসহ অসংখ্য মানুষ।
এ ছাড়াও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সেখানে উপস্থিত হয়ে উপদেষ্টা হাসান আরিফের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেন।
জানাজা শেষে প্রধান বিচারপতি শেষবারের মতো ফুলেল শ্রদ্ধা জানান হাসান আরিফের প্রতি। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবীদের পক্ষ থেকেও পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রোববার একমাত্র কন্যা ফ্রান্স থেকে বাংলাদেশে এসে শেষবারের মতো হাসান আরিফকে শ্রদ্ধা জানানোর পর মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে।
ধানমন্ডি ৭ নম্বর বায়তুল আমান মসজিদে শুক্রবার এশার নামাজের পর উপদেষ্টার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে শুক্রবার বেলা ৩টা ১০ মিনিটে ইন্তেকাল করেন হাসান আরিফ, যার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে, অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মী ও গুণগ্রাহী রেখে যান।
গত ৮ আগস্ট গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারে প্রথমে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছিলেন হাসান আরিফ। দায়িত্ব পুনর্বণ্টনের পর তাকে ভূমি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়।
তিনি ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ থেকে ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা ছিলেন।
এ এফ হাসান আরিফ তার কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৬৭ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা হাইকোর্ট থেকে। এরপর ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন।
এর আগে এ এফ হাসান আরিফ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে রয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও গ্রামীণফোন বাংলাদেশ।
তিনি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ, নির্মাণ সালিশ, বাণিজ্যিক সালিশ, অর্থ, ব্যাংকিং এবং সিকিউরিটিজ বিষয়, করপোরেট, বাণিজ্যিক ও ট্যাক্সেশন বিষয়, সাংবিধানিক আইন বিষয়, আরবিট্রেশন এবং বিকল্প বিরোধ সমাধানের অন্যান্য পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছেন।
তিনি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির কমপ্লেক্সের উপদেষ্টা ছিলেন।
এ এফ হাসান আরিফ ১৯৪১ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর স্নাতক ও এলএলবি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।