রাজধানীর পূর্বাচলে গাড়ির ধাক্কায় বুয়েট শিক্ষার্থী মোহতাসিম মাসুদ নিহত হওয়ার ঘটনায় আটক তিনজনকে নারায়ণগঞ্জ আদালতে হাজির করে পাঁচদিন রিমান্ডের আবেদন করেছে পুলিশ।
এই তিন আসামি হলেন- মুবিন আল মামুন, মো. মিরাজুল করিম ও আসিফ চৌধুরী।
রূপগঞ্জ থানা পুলিশ শুক্রবার তিন আসামিকে আদালতে হাজির করে পাঁচদিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। তবে ছুটির দিন হওয়ায় রিমান্ড শুনানির জন্য আগামী রোববার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক কাইউম খান গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, তিন আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাসুদ বৃহস্পতিবার রাতে মোটরসাইকেল নিয়ে দুই বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে বের হন। রাতে বাসায় ফেরার সময় পূর্বাচলে নীলা মার্কেট সংলগ্ন পুলিশ চেকপোস্টে তাদের মোটরসাইকেলটিকে থামানো হয়।
রাত আনুমানিক ৩টার দিকে পুলিশ চেকপোস্টে দাঁড়ানো অবস্থায় বেপরোয়া গতির একটি প্রাইভেটকার সেই চেকপোস্ট অতিক্রম করার সময় মোটরসাইকেলটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মাসুদ মারা যান এবং অমিত সাহা ও মেহেদী হাসান আহত হন। আহত দুজনও বুয়েটের শিক্ষার্থী।
এ ঘটনায় প্রাইভেটকারে থাকা মুবিন আল মামুন, মো. মিরাজুল করিম ও আসিফ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার মুবিন আল মামুন রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএস এলাকার বাসিন্দা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহ আল মামুনের ছেলে। প্রাইভেট কারটির রেজিস্ট্রেশনও সাবেক ওই সেনা কর্মকর্তার নামে।
অন্য দুজনের মধ্যে মিরাজুল করিম রাজধানীর মিরপুর পীরেরবাগ এলাকার রিজওয়ানুল করিমের ছেলে এবং আসিফ চৌধুরী উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের বাহাউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে।
গ্রেপ্তার হওয়া এই তিনজনই শিক্ষার্থী। তাদের প্রাইভেট কারটিতে তল্লাশি চালিয়ে মদের একটি খালি বোতল ও বিয়ারের একটি ক্যান পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
আদালত চত্বরে আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু রায়হান বলেন, ‘গত রাতে খুব কুয়াশা ছিল এবং সড়কে সংকেতবিহীন চেকপোস্ট ছিল। গাড়িটি হঠাৎই চেকপোস্টের ব্যারিকেডে ধাক্কা দেয় এবং ব্যারিকেডটি পরে মোটরসাইকেলে ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।’
তবে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, পূর্বাচল এলাকায় ঘন ঘন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছিল। এ কারণে গত দুই সপ্তাহ ধরে ৩০০ ফুট সড়কের ওই জায়গায় চেকপোস্ট বসায় পুলিশ। চেকপোস্টের বিষয়ে নির্দিষ্ট দূরত্বে সংকেতও ছিল।
তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর প্রাইভেটকারের চালকের আসনে থাকা মুবিন আল মামুন ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখাতে পারেননি।’
প্রাইভেট কারের চালকসহ দুজনের শরীরে অ্যালকোহল
মুবিনসহ তিন আসামির ডোপ টেস্ট করা হয় নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুশিউর রহমান জানান, ‘টেস্টে মুবিনের শরীরে অ্যালকোহল ও গাঁজার ট্রেস পাওয়া গেছে। অপরদিকে মিরাজুলের শরীরে অ্যালকোহলের ট্রেস পাওয়া গেছে। আর আসিফের শরীরে কোনো নেশাজাতীয় দ্রব্যের ট্রেস পাওয়া যায়নি।’