যমুনা বহুমুখী সেতুর ৩০০ মিটার উত্তরে নবনির্মিত দেশের দীর্ঘতম রেল সেতুটি এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। চার দশমিক আট কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটিতে ইতোমধ্যে কয়েক দফায় ট্রেন চলাচলের ট্রায়ালও সম্পন্ন করা হয়েছে। চলছে রঙ-তুলি ও সাজসজ্জার কাজ। এখন দেশের উত্তর অঞ্চলের মানুষ দিন গুনছেন এটি উদ্বোধনের।
সেতুটি চলতি বছরের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ বা শেষের দিকে উদ্বোধনের কথা থাকলেও তা পিছিয়ে যায়। সে সময় জানানো হয়েছিল, আগামী ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে এটি উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে।
এবার রেল সচিব ফাহিমুল ইসলাম জানিয়েছেন, যমুনা রেল সেতু আগামী জানুয়ারির শেষ বা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে উদ্বোধন করা হবে।
শুক্রবার যমুনা রেল সেতু-পূর্ব স্টেশন পরিদর্শনকালে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেন রেল সচিব ফাহিমুল ইসলাম।
শুক্রবার দুপুরে টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে যমুনা সেতু পূর্ব রেল স্টেশনের সদ্য নির্মিত আধুনিক ভবন ও প্লাটফর্ম পরিদর্শনকালে তিনি এ কথা জানান।
প্রকল্পের কাজের মান দেখে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘যমুনা বহুমুখী সেতু দিয়ে ট্রেন কম গতিতে চলাচল করলেও রেল সেতু দিয়ে ট্রেন পূর্ণ গতিতে চলাচল করতে পারবে।’
টাঙ্গাইল-গাজীপুর রেললাইনটি ডাবল লেন করা প্রসঙ্গে সচিব বলেন, ‘রেল সেতুটি জাইকার সহায়তায় বাস্তবায়ন হয়েছে। ঠিক তেমনি আরও বেশ কিছু প্রকল্প জাইকার সহায়তায় করা হবে। সেই প্রকল্পগুলোর আওতায় জনগণের সুবিধার জন্য টাঙ্গাইল-গাজীপুর রেল লাইনটি ডাবল লেনের করা হবে। প্রয়োজনে এই রুটে নতুন ট্রেন সংযুক্ত করা হবে।’
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আফজাল হোসেন, যমুনা রেলওয়ে সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিডি) আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী তানভীরুল ইসলাম এবং সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালে ‘বঙ্গবন্ধু সেতু’ চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেয়ায় কমিয়ে দেয়া হয় ট্রেনের গতি। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হচ্ছে।
এসব সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর বর্তমান সেতুর ৩০০ মিটার উজানে আলাদা রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি সেতুটির ভিত্তি স্থাপন করেন। এরপর ২০২১ সালের মার্চে রেল সেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়।
প্রথমে প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা নির্ধারিত হলেও পরবর্তীতে তা ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ অর্থায়ন এসেছে দেশীয় উৎস থেকে এবং ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ ঋণ দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।