কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপ গ্রাম সুতারপাড়া। শুকনো মৌসুমেও শহরের সঙ্গে এ গ্রামের যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম নৌকা।
হাওরের এ গায়ে এর আগে কখনও পা পড়েনি বড় চিকিৎসকের। গ্রামীণ পল্লী চিকিৎসকই তাদের চিকিৎসার একমাত্র ভরসা। আর্থিক সংকট আর সময়ের অভাবে এ গ্রামের বাসিন্দাদের খুব একটা যাওয়া হয় না বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে।
বিজয়ের ৫৩ বছরে সেই অপেক্ষা ফুরোল গ্রামবাসীর। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হলো গ্রামবাসীকে, যার আয়োজক সুতারপাড়া মানব কল্যাণ ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠন।
সুতারপাড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দিনব্যাপী আয়োজনে তিন চিকিৎসক এবং দুজন টেকনিশিয়ানের মাধ্যমে ইসিজি, ডায়াবেটিস টেস্ট, ব্লাড প্রেশার চেক ও ওজন পরিমাপসহ বিভিন্ন রোগের পরামর্শ দেয়া হয়।
গ্রামের প্রায় ৫০০ নারী, পুরুষ ও শিশু এবং সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে স্বাস্থ্যসেবা পরিণত হয় উৎসবে। হাতের নাগালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাওয়ায় খুশির ঝিলিক দেখা যায় তাদের চোখে-মুখে।
সুতারপাড়া গ্রামের ৭০ বছর বয়সী বিলাসী বেগম জানান, তার জন্মের পর এই গ্রামে এমন আয়োজন দেখেননি।
তিনি বলেন, ‘গ্রামে বিজয় দিবসের এমন উৎসব জীবনেও দেহি নাই।’
একই গ্রামের রূপজান বেগম ও মোহাম্মদ শামসুদ্দিন জানান, হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে গেলে অনেক টাকা-পয়সার প্রয়োজন। অর্থ সংকট এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে হাসপাতালে যেতে পারেন না তারা। সুতারপাড়া মানব কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বাড়িতে বসে চিকিৎসা নিতে পেরে অত্যন্ত খুশি তারা।
সুতারপাড়া মানব কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোক্তা আবদুল্লাহ শাফি, মাসুদ রানা ও সাদেক মিয়া জানান, এবারের বিজয় উৎসবে ভিন্নমাত্রা যোগ করতেই এমন আয়োজন করেছেন তারা।
উদ্যোক্তারা জানান, মহান বিজয় দিবসে তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের সেবা দিতে পেরে তারাও গর্বিত ও আনন্দিত। ভবিষ্যতে এ সেবার পরিধি আরও বৃহৎ আকারে করতে চান তারা। বিজয়ের এমন উৎসব ছড়িয়ে পড়বে সব গ্রামে। কেউ বঞ্চিত হবে না, উন্নত চিকিৎসা থেকে এমন প্রত্যশা তাদের।
সুতারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘সুতারপাড়া থেকে উপজেলা ১৫ কিলোমিটার এবং জেলা সদরের দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। নৌকা এবং অটোরিকশায় করে এখান থেকে উপজেলা বা জেলা সদরে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হলে চিকিৎসক ফি এবং যাতায়াত ভাড়ায় অনেক টাকার প্রয়োজন।’
গ্রামের একটি সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে বাড়িতে বসেই চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ হওয়ায় উদ্যোক্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
চিকিৎসক তৌফিক আহমেদ শামীম জানান, প্রান্তিক পর্যায়ের সাধারণ মানুষ সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত। তাদের কাছে এসে চিকিৎসাসেবা দিতে পেরে তারা আনন্দিত।