আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে তুলে নিয়ে তার পায়ের রগ কেটে দিয়েছে একদল দুর্বৃত্ত।
এসব দুর্বৃত্ত মিসবাহ সিরাজের পরিবারের কাছ থেকে ‘মুক্তিপন’ হিসেবে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মিসবাহ সিরাজের পরিবারের সদস্যরা এ ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হননি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর থেকেই আত্মোগপনে ছিলেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ এ নেতা। তার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলার অভিযোগে একাধিক মামলা হয়েছে।
নগরের সাগরদিঘির পাড় এলাকা থেকে শুক্রবার ভোরের দিকে মিসবাহ সিরাজকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তার আগের রাতে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরিবারের সদস্যরা গোপনীয়তা বজায় রাখায় বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা এ বিষয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিতে থাকেন। তখন থেকেই বিষয়টি জানাজানি হয়।
গতকাল রাতে এক ফেসবুক পোস্টে সিলেট সিটি করপোরেশনের অপসারিত মেয়র ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী লিখেন, ‘আওয়ামী লীগের তিনবারের নির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে হত্যার উদ্দেশ্যে ন্যক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সিলেটের ইতিহাসে এই ঘটনা এক কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে।
‘পুণ্যভূমি সিলেটে কোনো রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতার ওপর কোনো কালেই এমন ঘৃণ্য কাপুরুষোচিত হামলার ঘটনা ঘটেনি। এই ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার ইনশাআল্লাহ এই সিলেটের মাটিতে সিলেটের মানুষকে সঙ্গে নিয়েই করা হবে।’
তিনি লিখেন, ‘মিসবাহ ভাইকে গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাত ১২টায় সিএনজি অটোরিকশা থেকে অপহরণ করে নির্মম অত্যাচার-নির্যাতন ও ছুরিকাঘাত করে পায়ের রগ কেটে রাস্তায় ফেলে রাখে সন্ত্রাসীরা। বর্তমানে উনার অবস্থা আশংকাজনক।’
মিসবাহ সিরাজের ওপর হামলার ঘটনা শুনেছেন জানিয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে অপহরণ, মারধর ও মুক্তিপণ আদায় করা হয়েছে হয়েছে বলে শুনেছি, কিন্তু বিস্তারিত কিছু জানি না।
‘পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশকে কোনো তথ্য জানানো হয়নি। তারা পুলিশকে এড়িয়ে চলছেন।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশ এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছে। যে এলাকায় ঘটনা ঘটেছে বলে শোনা যাচ্ছে, সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে।
‘তিনি নগরের আল হারামাইন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন, এই প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে বর্তমানে তার অবস্থান কোথায়, তা জানা নেই।’
মিসবাহ সিরাজের নামে সাতটি মামলা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সন্ধান পেলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।’
সিরাজের স্বজনসহ একাধিক সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মিসবাহ সিরাজ সিএনজিচালিত অটোরিকশায় নগরের সুবিদবাজারের মিয়া ফাজিল চিশত এলাকায় একটি বাসায় যাচ্ছিলেন। পথে ওই এলাকার মাসালাবাজার নামীয় প্রতিষ্ঠানের সামনে পৌঁছামাত্র কয়েকটি মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা তার অটোরিকশার গতিরোধ করে। অস্ত্রের মুখে তাকে অন্য একটি অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যায়।
এর কিছুক্ষণ পর মিসবাহ সিরাজের মোবাইল ফোন থেকে তার স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে অপহরণকারীরা। তারা কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এ নিয়ে দর কষাকষির পর ২৫ লাখ টাকা প্রদান করা হয়।
রাত সাড়ে তিনটার দিকে মুক্তিপণের টাকা মধ্যস্থতাকারীর হাতে তুলে দেয়ার পর মিসবাহ সিরাজকে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় সাগরদিঘীর পাড় এলাকায়। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে রাগীব-বাবেয়া হাসপাতালের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে নগরের সোবহানীঘাটের আল হারামাইন হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনরা। ভোররাত চারটার দিকে ওই হাসপাতালে তার পায়ে অস্ত্রোপচার হয়। অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে তিন ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়।
শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে তিনি ওই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। এরপর এভারগ্রিনের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ বিষয়ে আল হারামাইন হাসপাতালের পরিচালক ডা. চৌধুরী নাহিয়ান বলেন, ‘ভোররাত ৪টার দিকে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এরপর তার পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। যদিও স্বজনেরা বলেছেন, তিনি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন।’
ডা. চৌধুরী নাহিয়ান আরও বলেন, ‘মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের বাম পায়ে হাঁটুর নিচে রক্তাক্ত কাটা জখম রয়েছে। অস্ত্রোপচারের পর সকাল ১০টার দিকে তাকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। এরপর তাকে নিয়ে যান স্বজনরা।’
এ বিষয়ে জানতে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও তার স্ত্রীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও বন্ধ পাওয়া যায়।
মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের মেয়ে মুনতাহা আহমদ বলেন, ‘আমার বাবার অবস্থা গুরুতর। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানাতে রাজি হননি তিনি। মুক্তিপণ প্রদানের বিষয়েও কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।