মিয়ানমারের রাখাইনে মংডু শহর বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) দখল করে নেয়ার পর তিন দিন সেখান থেকে এপারে গোলার শব্দ ভেসে আসেনি। তবে আবারও অশান্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারের জনপদ। ভেসে আসছে গোলার বিকট শব্দ।
নতুন করে গোলার শব্দ ভেসে আসার ঘটনায় কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা নতুন করে কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় বাংলাদেশ সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড।
এছাড়া বঙ্গোপসাগর হয়ে শাহপরীর দ্বীপ বদর মোকাম এলাকায় বিকল্প পথ ‘গোলাচর’ ও কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌপথ দিয়ে পর্যটকবাহী জাহাজসহ নৌযান চলাচল করছে। তবে কোনো নৌযান যাতে বাংলাদেশ জলসীমা অতিক্রম না করে, সেজন্য সব নৌযানকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দীন বলেন, ‘টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে নৌযান চলাচলসহ মাছ ধরার ট্রলার সাগরে মাছ শিকারে যাচ্ছে। তবে নৌযানগুলো যাতে কোনোভাবে বাংলাদেশ জলসীমা অতিক্রম না করে সেজন্য বার বার বলা হয়েছে।
‘আর জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করে শাহপরীর দ্বীপ-গোলাচর রুট ব্যবহার করতে বলা হয়েছে তাদের। সেক্ষেত্রে আমাদের বিজিবির পাশাপাশি কোস্টগার্ড নাফ নদ-সাগরে টহল অব্যাহত রেখেছে।
‘রাখাইনে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যাতে নতুন করে কোনো অবৈধ অনুপ্রবেশ না ঘটে তা নিশ্চিত করতে সীমান্তে আমাদের বিজিবি ও কোস্টগার্ডের জোরদার টহল রয়েছে।’
এদিকে শাহপরীর দ্বীপের জেটি ঘাট, মিস্ত্রি পাড়া ঘাট, দক্ষিণ পাড়া ঘাট ও পশ্চিম পাড়া ঘাট থেকে ২০টির বেশি মাছ ধরার ট্রলার নাফ নদের বিকল্প রুট গোলারচর হয়ে সাগরে মাছ শিকারে বের হয়েছে।
শাহপরীর দ্বীপের জেটি ঘাটের জেলে মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, ‘সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসার কারণে মাঝখানে নৌযান চলাচল বন্ধ ছিল। আমরা আজ বেশ কয়েকটা মাছ ধরার ট্রলার সাগরে মাছ শিকারে যাচ্ছি। তবে আমরা যেন কোনোভাবেই বাংলাদেশের জলসীমা অতিক্রম না করি সেজন্য বিশেষ বার্তা দেয়া হয়েছে।’
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ঘাটে ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর গফুর আলম বলেন, ‘আমার ঘাটে ২৫-৩০টি মাছ ধরার ট্রলার রয়েছে। আজকে আটটি ট্রলার মাছ ধরার জন্য বের হয়েছে। অন্য ঘাট থেকেও বেশকয়েকটি ট্রলার মাছ শিকারে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘জেলেদের বলে দেয়া হয়েছে, যাতে ওপারে সীমানার দিকে না যায়। তবে সাগরে জলসীমায় বয়া না থাকার কারণে জোয়ার-ভাটায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার জলসীমা বুঝতে কষ্ট হয় জেলেদের। অনেক সময় জেলেরা বুঝতে না পেরে মিয়ানমারের জলসীমায় ঢুকে পড়ে। তাই নাফ নদ ও সাগরে জেলেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সীমানা বয়া দেয়া খুবই জরুরি।’
ওদিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত রোববার মংডুতে সামরিক জান্তার বর্ডার গার্ড পুলিশ ডিভিশন (নাখাখা-৫)-এর শেষ পোস্টটিও দখল করে নেয় আরাকান আর্মি। এরপর থেকে তিন দিন সীমান্তের ওপার থেকে গোলার শব্দ ভেসে আসেনি।
তবে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে শুক্রবার ভোরে গোলার বিকট শব্দ শুনেছেন বলে জানিয়েছেন সীমান্তের বাসিন্দারা। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
সীমান্তের বাসিন্দা নুরুল আলম বলেন, ‘বেশ কয়েকদিন পর ভোরে ওপার থেকে গোলার শব্দ পাওয়া গেছে। তবে এর তীব্রতা তুলনামূলক কিছুটা কম। শুনেছি ওপারে মংডু পুরোপুরি আরাকান আর্মির দখলে। তাই সেখানকার রোহিঙ্গারা পালানোর চেষ্টা করছে। ফলে তারা এপারে প্রবেশের চেষ্টা চালাতে পারে। তবে আমাদের সীমান্তে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে আছেন।’
বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের চট্টগ্রাম মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সোয়াইব বিকাশ বলেন, ‘নাফ নদে আমাদের টহল জোরদার রয়েছে। পাশাপাশি টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে নৌযানগুলো যাতে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। পাশাপাশি অনুপ্রবেশ রোধেও আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।’