চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে গুপ্ত হামলার শিকার হয়েছন দুই শিক্ষার্থী।
নিরাপত্তাকর্মীর উপস্থিতিতে এমন ঘটনা ঘটলেও কোনো পদক্ষেপ না নেয়ার অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগীরা।
তাদের ভাষ্য, প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। এ কারণে প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দপ্তর সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ডের সামনে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
আহত দুই শিক্ষার্থী আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র।
ভুক্তভোগীদের সহপাঠীরা জানান, ব্যাচের বারবি কিউ পার্টি থেকে ফেরার পথে অস্ত্রধারী পাঁচ থেকে ছয়জন মাফলার ও মুখোশ পরে হামলা করে। প্রথম পর্যায়ে লাথি ও কিল-ঘুষি মারা শুরু করে এবং পরবর্তী সময়ে ব্যাগ থেকে গিয়ার নাইফ ও আগ্নেয়াস্ত্র বের করে জীবননাশের চেষ্টা করে। সে সময় একজন মোটরসাইকেল আরোহী চলে আসায় দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। এরপর ভুক্তভোগীরা কোনো নিরাপত্তা ছাড়াই ব্যাচমেটদের কাছে ফিরে সবাইকে বিষয়টি জানায়।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে একজন ভুক্তভোগী বলেন, ‘প্রোগ্রাম শেষ করে আমরা বাসায় ফিরছিলাম। এমন সময় সামনে একটা গ্রুপকে আসতে দেখি, কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওরা আমাদের ধাওয়া করে। একপর্যায়ে আমার বন্ধুকে ধরে মারধর করতে থাকলে আমি চিল্লাচিল্লি করতে থাকি।
‘তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে দুজন আমার মুখ ও গলা চেপে ধরে। আমি ধাক্কা দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করলে একজন পড়ে যায়। সে তখন পকেট থেকে ছুরি বের করে আমাকে জঙ্গলে নিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুরো ঘটনায় নিরাপত্তাকর্মীর বক্সের সামনে ঘটেছে এবং তিনি সবকিছু দেখেছেন, কিন্তু বের হয়ে আমাদের সাহায্য করেননি। আমরা সারা রাত চেষ্টা করেও কোনো প্রক্টরের সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। এমনকি এখনও পর্যন্ত কেউ আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি।’
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মুবতাসিম ফাইয়াজ বলেন, ‘আমরা ঘটনা ঘটার পর নিরাপত্তা দপ্তরে যাই। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা সেই নিরাপত্তাকর্মীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করেন এবং জানান তার কিছু করার ছিল না।
‘আমরা প্রায় চার ঘণ্টা ধরে প্রক্টরিয়াল বডির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি, কিন্তু কেউই আমাদের ফোন রিসিভ করেনি। পরবর্তী সময়ে ফোন বন্ধ দেখায়।’
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের নিরাপত্তাহীনতা আমাদের জন্য হুমকিস্বরূপ। আমরা এটার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা ভোর পাঁচটা পর্যন্ত নিরাপত্তা দপ্তরের সামনে অবস্থান করি, কিন্তু প্রক্টরিয়াল বডির কেউ সেখানে আসেননি।
‘আমরা প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ দাবি করছি এবং এর যথাযথ জবাব চাই।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, ‘প্রক্টরিয়াল বডি নিষ্ক্রিয় ছিল, এটি অসত্য। আমাদের একজন সহকারী প্রক্টর তাদের সাথে রাতেই কথা বলেন, তবে রাত দুইটার সময় সেখানে যাওয়ার মতো সিরিয়াস ইস্যু ছিল না।
‘আমাদের প্রতিনিধি তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে বলে এবং রোববার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ঘটনার তদন্ত করার কথা জানান।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নিরাপত্তাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় ছিল। আমরা তাদের সক্রিয় করতে চেষ্টা করছি। দায়ীদের শোকজ করা হবে।’