নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, অতীতের নির্বাচনে অনেক অপরাধ হয়েছে। সেসব অপরাধের বিচার হওয়া দরকার। সেটাও আমরা আলোচনা করেছি। যারা অপরাধ করেছেন, যাদের অপরাধ প্রমাণ হবে, তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আসতে হবে।
নির্বাচন ভবনে বুধবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে মতবিনিময় শেষে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন।
বিগত তিন কমিশন নাকি সব কমিশনকে বিচারের আওতায় আনা হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম বলেন, ‘যারা অপরাধ করেছে, সবাইকে আসতে হবে। এগুলো তো সুস্পষ্টভাবে আলোচনা হয়নি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, ৭৩ থেকে ৯০ ধারার মধ্যে নির্বাচনের অপরাধের বিষয়গুলো বর্ণনা করা আছে। এগুলোর যাতে যথাযথ প্রয়োগ হয় সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’
সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, ‘নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট হওয়ার আগে নির্বাচন কমিশন তদন্তসাপেক্ষে নির্বাচন বাতিল করতে পারতেন। শুধু বাতিল নয়, তদন্তসাপেক্ষে পুনঃনির্বাচন দেয়ার ক্ষমতা তাদের আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই ক্ষমতা তারা ব্যবহার করেননি।’
তিনি আরও বলেন, নতুন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য বদ্ধপরিকর। আমরাও আমাদের অবস্থান থেকে সুচারুভাবে, সম্পূর্ণভাবে শেষ করার জন্য সংস্কার প্রস্তাব দেবো। যেগুলোর কিছু তারা বাস্তবায়ন করবে, আবার কিছু সরকার বাস্তবায়ন করবে। আর কিছু সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বাস্তবায়ন করবে।’
কমিশন প্রধান বলেন, নির্বাচন কমিশন ও তাদের দায়দায়িত্ব, ক্ষমতা, স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মনোনয়নপত্র চূড়ান্ত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত কার হওয়া উচিত, আদালতের কী ভূমিকা থাকবে, হলফনামা না ভোট, সীমানা পুনঃনির্ধারণ, পোস্টাল ব্যালট, প্রবাসী ব্যালট, ভোটার তালিকা, নির্বাচনি অপরাধ, এনআইডিসহ নির্বাচনের সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেইনি, কিছু বিষয় চিহ্নিত করেছি। এগুলো নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করছি। আমাদের এখনও এক মাস সময় আছে। আশা করি এক মাসের মধ্যে সুপারিশগুলো চূড়ান্ত করে সরকারের কাছে দিতে পারবো। ওনাদের (ইসি) কিছু মতামত চেয়েছি, ওনারা কিছু শেয়ার করতে চাইলে শেয়ার করবেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা আছে এবং সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের খাতিরে দিনকে রাত, রাতকে দিন করা ছাড়া সবই কমিশন করতে পারে। আইনে বলা আছে, আদালতের সুস্পষ্ট বলা আছে।
‘আলতাফ হোসেন বনাম আবুল হোসেনের মামলায় আমাদের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বলেছে- সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের খাতিরে আইন-কানুন বিধিবিধানের সঙ্গে সংযোজন করতে পারে। যেখানে অস্পষ্টতা আছে, যেখানে গ্যাপ আছে, সেগুলো তারা পূরণ করতে পারে।’
নতুন কমিশনের পক্ষ থেকে আপনাদের কোনো মতামত দিয়েছে কিনা- এই প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়নি৷ আমাদের মতবিনিময়ের মাধ্যমে অনেক কিছু উঠে এসেছে। মনে হলো আমাদের কোনো মতপার্থক্য নেই৷ ওনারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। আমরা সহায়তা করতে একপায়ে রাজি আছি। আমাদের সবার লক্ষ্য একটাই।’
এর আগে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনাররা ও সংস্কার কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।