বিক্ষোভ মিছিল মোকাবিলা ও বিরোধী দল-মত দমনে মাত্রারিক্ত বল প্রয়োগ করা ফৌজদারি অপরাধ বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যের শাস্তি দাবি করেছেন ৭১.৫ শতাংশ মানুষ৷
পুলিশ সংস্কার কমিশন পরিচালিত ‘কেমন পুলিশ চাই’ শীর্ষক জরিপের ফলাফল মঙ্গলবার প্রকাশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ। সেখানেই এসব তথ্য উঠে এসেছে।
জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, ৬৮.৮ শতাংশ উত্তরদাতা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত করে প্রতিস্থাপিত প্রমিত পদ্ধতি অনুসরণকে প্রবিধানভুক্ত করার পক্ষে মত দিয়েছেন।
এ ছাড়া মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও অনুগত পুলিশ সদস্যকে উৎসাহিত করতে বার্ষিক কর্মমূল্যায়নে পুরস্কার ও তিরস্কারের ব্যবস্থা রাখার পক্ষে ৬৮.২৭ শতাংশ সমর্থন করেছেন।
জরিপে আরও দেখা যায়, সভা-সমাবেশ আয়োজনে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের পূর্বানুমতি গ্রহণকে মৌলিক অধিকার পরিপন্থি মনে করেন ৫১.৮ শতাংশ উত্তরদাতা। অন্যদিকে প্রত্যয়টির সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত নন ৩৭.৪ শতাংশ উত্তরদাতা। ১০.৮ শতাংশ উত্তরদাতা এ বিষয়ে অনিশ্চিত বা দ্বিধান্বিত।
একটি বিষয় স্পষ্ট যে, সংবিধানের ৩৭ নম্বর অনুচ্ছেদে সভা-সমাবেশ আয়োজন মতপ্রকাশের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ আইন-১৯৭৬ এর ২৯ নম্বর ধারায় পুলিশ কমিশনারকে অনুরূপ সমাবেশ জনস্বার্থে সর্ব্বোচ্চ ৩০ দিন স্থগিত করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, কিন্তু আয়োজনে পূর্বানুমতি গ্রহণের বিষয়টি সেখানে উল্লেখ নেই। দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিকাশে ৭১.২ শতাংশ উত্তরদাতা বিধানটির পরিবর্তন চান।
জরিপে দেখা যায়, উত্তরদাতাদের ৮২.৫ শতাংশ ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা বিধানকে সহজে অপব্যবহারযোগ্য আইনের বিধান মনে করেন। উত্তরদাতাদের ৪৬.২ শতাংশ ধারাটি যুগোপযোগী সংস্কার চান।
ঔপনিবেশিক আমলে প্রণীত ৫৪ ধারায় বিধান যুগোপযোগী করার অর্থ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে বিজ্ঞানসম্মত জীবনমাত্রার সুফলযুক্ত ব্যবস্থা।
এ ক্ষেত্রে ৩৯.৭ শতাংশ উচ্চ আদালতের সুপারিশ মতে ৫৪ ধারার বিধান সংশোধনের পক্ষে মত দিয়েছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ জরিপে অংশ নেন ২৪ হাজার ৪৪২ জন। এদের মধ্যে ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদের অংশগ্রহণের হার ৮৬.৬ শতাংশ।
উত্তরদাতাদের মধ্যে চাকরিজীবী ৩৬.৪ শতাংশ, শিক্ষার্থী ২৭.২ শতাংশ, ব্যবসায়ী ৭.৬ শতাংশ এবং প্রকৌশলী ৭.১ শতাংশ। এসব উত্তরদাতার মধ্যে সর্বাধিক ঢাকা জেলার এবং পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা।
জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, উত্তরদাতাদের মধ্যে সর্বাধিক মতামত এসেছে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পুলিশের পক্ষে। এ ছাড়া দ্বিতীয় অবস্থানে নিরপেক্ষ পুলিশ ও তৃতীয় অবস্থানে দুর্নীতিমুক্ত পুলিশ চাই, এমন ক্যাটাগরিতে মতামত এসেছে৷
পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অবসান চান ৮৯.৫ শতাংশ উত্তরদাতা। ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুলিশের দুর্নীতি বন্ধ চান ৭৭.৯ শতাংশ উত্তরদাতা।
এ ছাড়া গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িত এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বিবেচনায় অপরাধী পুলিশকে শাস্তির আওতায় আনার দাবি করেছেন ৭৪.৯ শতাংশ উত্তরদাতা।
ভুয়া ও গায়েবি মামলার অবসান চান ৯৫ শতাংশ উত্তরদাতা।