নানা জটিলতা কাটিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো ট্রাভেল পাসের মাধ্যমে চলতি মৌসুমে ৬৫৩ জন পর্যটক নিয়ে প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে রওনা করেছে ‘এমভি বার আউলিয়া’।
কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে রোববার সকাল ১০টার দিকে জাহাজটি ছেড়ে যায়।
জাহাজটির বিকেল নাগাদ দ্বীপে পৌঁছার কথা রয়েছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেয় জেলা প্রশাসন।
ওই দিন ‘কেয়ারী সিন্দাবাদ’ নামের একটি জাহাজ পর্যটক নিয়ে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার কথা থাকলেও পর্যটক সংকটের কারণে যাত্রা বাতিল করে।
এমভি বার আউলিয়ার পরিচালক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘রোববার তিনটি জাহাজ ছাড়ার পরিকল্পনা থাকলেও ছেড়েছে কেবল এমভি বার আউলিয়া। জাহাজটিতে ৮৫০ জন যাত্রীর ধারণক্ষমতা থাকলেও যাচ্ছেন ৬৫৩ জন।’
এ রুটে রোববার পর্যন্ত কেয়ারী সিন্দাবাদ ও এমভি বার আউলিয়া ছাড়াও কর্ণফুলী এক্সপ্রেস চলাচলের অনুমতি পেয়েছে।
যাত্রী সংকটের কারণে বার আউলিয়া ছাড়া অপর দুটি জাহাজ সেন্টমার্টিন যায়নি।
সেন্টমার্টিনে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির আহ্বায়ক এবং কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেয়া নির্দেশনা মেনে পর্যটকরা আগামী জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন। দৈনিক দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবেন।’
ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে সপরিবারে সেন্টমার্টিন যাচ্ছেন ওবাইদুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘দ্বীপে দুই দিন থাকার পরিকল্পনা নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের মতো অনেকেই দুই/এক দিন থাকার প্রস্তুতি নিয়েই সেন্টমার্টিন যাচ্ছেন।’
জেটিতে জাহাজে ওঠার সিঁড়িতে পর্যটকদের হাতে পলিথিন ও সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক আছে কি না, সেটি তদারকি করতে দেখা যায় পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের।
পর্যটকরা যাতে জাহাজে পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জমির উদ্দিন।
তিনি বলেন, পর্যটকদের পলিথিন ব্যাগের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ দেয়া হয়েছে। জাহাজে যাতে কোনোভাবে পলিথিন ও সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর থাকবে পরিবেশ অধিদপ্তর।
এদিকে সকালে পর্যটকবাহী জাহাজ পরিদর্শনে যান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক ভ্রমণ এবং জাহাজ চলাচলের বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে কক্সবাজার শহর থেকে জাহাজ চলাচলের ঘাট নির্ধারণ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা কার্যকর করতে এ সংক্রান্ত গঠিত কমিটি কাজ করবে।’
গত ১৯ নভেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সাবরীনা রহমান স্বাক্ষরিত আদেশে সেন্টমার্টিনে ভ্রমণে যাওয়া পর্যটক ও অনুমোদিত জাহাজ নিয়ন্ত্রণে যৌথ কমিটি গঠন করা হয়।
আদেশে বলা হয়, সেন্টমার্টিনে যেতে হলে পর্যটকদের নিবন্ধনসহ নানা বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। ওই মন্ত্রণালয়ের গঠন করা যৌথ কমিটি এসব বিষয় দেখভাল করবে।
কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে কক্সবাজার সদর ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালককে করা হয়েছে সদস্যসচিব।
মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতের কারণে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন রূটে পর্যটনের জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়। সে সময় থেকে ইনানী সৈকতে স্থাপিত নৌ জেটি ব্যবহার করে সেন্টমার্টিনে পর্যটক পরিবহন হতো, কিন্তু ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে ইনানী জেটিও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেখান থেকে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে।