ছাত্র নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলামূলক কর্মকাণ্ড ও অনৈক্যের কারণে ফ্যাসিবাদ প্রত্যাবর্তনে শঙ্কা রয়েছে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘এখন ঐক্যবদ্ধভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময়। আমরা যেন ফ্যাসিবাদ ফেরার রাস্তা তৈরি করে না দেই।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবে বৃহস্পতিবার এক মতবিনিময় সভায় বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
‘সংস্কারে লেখক ও শিল্পীদের ভূমিকা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় কবিতা পরিষদ।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ পরাজিত হয়েছে। কিন্তু যেকোনো সময় তারা ফিরে আসতে পারে। সেই পথ সুগম করে দেয়া আমাদের উচিত নয়। দুঃখজনকভাবে আমরা এমন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছি, যার ফলে তাদের ফিরে আসার যথেষ্ট সুযোগ তৈরি হয়েছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী শক্তি সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা যারা যুদ্ধ করেছিলাম তারা কেন এখন অনৈক্য সৃষ্টি করছি?
‘বিভিন্ন জায়গা থেকে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য শুনলে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে দেশকে ভিন্ন দিকে ঠেলে দেয়ার প্রচেষ্টা চলছে।’
তিনি বলেন, ‘জাতিকে এখন একটিমাত্র লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে সংসদ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করতে হবে।’
ভারতীয় মিডিয়ার সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কাল রাতে ভারতবর্ষের মিডিয়ার কয়েকজন ফোন দিয়েছেন। তাদের একটাই প্রশ্ন- ইসকনের ব্যাপারে আপনারা কী করছেন?
‘এই প্রশ্নটা একেবারেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, একটা অবস্থা সৃষ্টি করতে চায়। প্রথমবার ফেল করেছে, এখন আবার নতুন করে সে অবস্থাটা সৃষ্টি করতে চায়। এ ব্যাপারে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।’
কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে জাতিকে অনুপ্রাণিত করতে লেখক, শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র পুনর্গঠনে লেখক-শিল্পীদের ভূমিকা দীর্ঘদিনের। কিন্তু হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনবিরোধী আন্দোলনে তা স্পষ্ট হয়নি।
‘গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি লালন করা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে এটি অর্জন করতে হবে।’
জাতীয় কবিতা পরিষদের আহ্বায়ক কবি মোহন রায়হানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মনি, লেখক ও বুদ্ধিজীবী সলিমুল্লাহ খান, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠ সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ, কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান, গণ-অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান প্রমুখ।