গণঅভ্যুত্থানের তিন মাস না যেতেই আসল চেহারা বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
একইসঙ্গে গত কয়েক দিনে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও হানাহানির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।
নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবে এই আলোচনার আয়োজন করে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ড্যাব)।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিন মাসও হয়নি। এর মধ্যেই আমাদের সেই আসল চেহারা বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। এই চেহারা নিয়ে কোনোদিনই সাফল্য অর্জন করা যায় না- যতই বড় বড় কথা বলি, যতই লম্বা লম্বা বক্তৃতা করি। নিজের ঘরেই যদি বিভেদ থেকে যায়, আমরা সেটা কখনোই ঠিক করতে পারব না।’
সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই কয়টা দিনে আমরা খুব চিন্তিত, ভয়াবহভাবে উদ্বিগ্ন। ধর্মকে কেন্দ্র করে কী উন্মাদনা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে! যে মুক্ত স্বাধীন মিডিয়ার জন্য আমরা এতদিন লড়াই করলাম, তার অফিস পুড়িয়ে দিচ্ছে! এই বাংলাদেশ তো আমরা দেখতে চাই না।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য দীর্ঘ ১৫ বছর লড়াই করেছে, প্রাণ দিয়েছে, কারাগারে গেছে, নির্যাতিত হয়েছে। সেই মানুষগুলো ২০২৪-এর ৫ আগস্ট আরেকটি বিজয় অর্জন করেছে। সেই বিজয় অর্জন হয়েছে রাজপথে অনেক রক্তের মধ্য দিয়ে, অনেক প্রাণের ভেতর দিয়ে। কিন্তু তার ফল কি এই বাংলাদেশ?
‘তিন মাস হয়নি, এখনই রাস্তায় রাস্তায় লড়াই শুরু হয়েছে। একজন আরেকজনের বুকের রক্ত ঝরাচ্ছি। এখন পত্রিকা অফিস পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, আক্রমণ করছে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখি কিছুসংখ্যক মানুষ আছেন যারা জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও লেখেন। আমরা কি বুঝি, আমাদের ভয়টা কোথায়? কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি?’
তিনি বলেন, ‘১৪-১৫ বছর ধরে লড়াই করছি। যেকোনো সময় জেলখানায় যেতে প্রস্তুত আছি। কিন্তু আমি বাক, ব্যক্তি ও ভোটের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। আমরা লড়াই করে এই জায়গায় এসেছি। সুতরাং ধ্বংসাত্মক বাংলাদেশ দেখতে চাই না। আমরা গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করব ইনশাআল্লাহ। আমার দল ও আমি যা বিশ্বাস করি জীবন গেলেও বলব।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার কারও একক নয়। অসংখ্য তরুণ-জনতার আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত। সুতরাং গণতান্ত্রিকভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করুন। এমন কোনো কথা বলবেন না যাতে মানুষ বিভ্রান্ত হয়। যদি দেশকে ভালোবাসেন তবে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন না। কারও কাছে মাথানত করবেন না।’
ড্যাব সভাপতি ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মো. মেহেদী হাসান।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান ও ফরহাদ হালিম ডোনার, ড্যাবের মহাসচিব ডা. মো. আবদুস সালাম, বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, ড্যাবের সাবেক সভাপতি এ কে এম আজিজুল হক প্রমুখ।