বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শোকস্তব্ধ বাকশিমূল

  •    
  • ২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ২০:৪০

বুড়িচং থানার ওসি আজিজুল হক জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনটি কালিকাপুর এলাকায় পৌঁছলে রেললাইনের ওপর অটোরিকশাটি থেমে যায়। ট্রেনটি অটোরিকশাটিকে ধুমড়ে-মুচড়ে কিছুটা দূরে নিয়ে ফেলে। এতে ঘটনাস্থলেই চারজন ও হাসপাতালে নেয়ার পথে আরও তিন যাত্রীর মৃত্যু হয়।

কারও হাতের কব্জি পড়ে আছে। কারও বা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া পা। মগজ লেপ্টে আছে পাথরে। রেললাইনে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। বাতাসে মরদেহের গন্ধ। কাঁদছেন স্বজনরা। কিন্তু কে কাকে সান্ত্বনা দেবেন। আকষ্মিক দুর্ঘটনা আর প্রাণহানির এমন চিত্র দেখে শোকে কাতর বাকশিমূল।

মঙ্গলবার সকাল ১০টায় কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কালিকাপুর এলাকায় অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা সূবর্ণ এক্সপ্রেস ধাক্কা দিলে এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এই দুর্ঘটনায় অটোরিকশার চালকসহ সাতজন প্রাণ হারিয়েছেন। ধুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া অটোরিকশাটি কাগজের ঠোঙার মতো আছে রেললাইনের পাশে।

খবর পেয়ে হাজার হাজার মানুষ ঘটনাস্থলে আসেন। একসঙ্গে সাতজনের এমন প্রাণহানির দৃশ্য দেখে অশ্রুসজল হয়ে ওঠে সবার চোখ।

দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- বাকশিমূল পূর্বপাড়ার মনির হোসেনের স্ত্রী শাহিনুর আক্তার, বাকশিমূল মির্জাপুকুরপাড় এলাকার আলী আশরাফের স্ত্রী সফরজান বেগম, বাকশিমূল পূর্বপাড়ার মনসুর আলীর ছেলে আলী আহম্মদ, বাকশিমূল উত্তরপাড়ার আবদুল মালেকের স্ত্রী লুৎফা বেগম, একই এলাকার তৈয়ব আলীর ছেলে শাহজাহান, খোদাইতুলি এলাকার আসমত আলীর ছেলে রফিজ আলী এবং একই গ্রামের হোসনে আরা। তাদের মধ্যে দুজন বাদে বাকি সবাই ষাটোর্ধ্ব বয়সী।

খবর পেয়ে বুড়িচং থানার পুলিশ, রেলওয়ে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন।

বুড়িচং থানার ওসি আজিজুল হক জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনটি কালিকাপুর এলাকায় পৌঁছলে রেললাইনের ওপর অটোরিকশাটি থেমে যায়। ট্রেনটি অটোরিকশাটিকে ধুমড়ে-মুচড়ে কিছুটা দূরে নিয়ে ফেলে। এতে ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত হন। হাসপাতালে নেয়ার পথে আরও তিন যাত্রীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন একজন। ট্রেনে কাটা পড়ে ও ধাক্কায় কয়েকজনের শরীর ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

ঘটনাস্থল থেকে বাকশিমূল গ্রাম ৫ মিনিটের দূরত্বে। বাড়ির পাশে এমন মর্মান্তিক মৃত্যু নিতে পারছেন না স্বজনরা।

দুপুর ২টায় বাকশিমূল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, জানাজা নামাজ হচ্ছে। একে একে পাঁচজনের মরদেহ সমাহিত করা হয়। খোদাইতলী গ্রামের নিহত দুজনেরও মঙ্গলবার বিকেলেই দাফন কাজ শেষ করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, বুড়িচং থেকে কালিকাপুর যাওয়ার এই সড়কটির মাঝ দিয়ে রেললাইন বয়ে গেছে। অন্তত ১৫-২০ গ্রামের মানুষজন সড়কটি নিত্যদিন ব্যবহার করেন। তাদের একটা বড় অংশ রয়েছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। অরক্ষিত এই রেলক্রসিংট অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে পার হয় শিক্ষার্থীরা।

স্থানীয় কালিকাপুর আবদুল মতিন খসরু কলেজের শিক্ষার্থী আহনাফ জানান, প্রতিদিন সড়কটি দিয়ে হাজারো মানুষ যাতায়াত করে। কোনো গেট না থাকায় প্রায়ই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। রেলগেট না থাকায় সাতটি প্রাণ ঝরে ড়গেল।

ভবিষ্যতে যেন আর এমন দুর্ঘটনা না ঘটে সে জন্য শিক্ষার্থী আহনাফ রেলগেট নির্মাণের দাবি জানান।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আজিজুর রহমান খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তিনি জানান, এখানে রেলগেট নির্মাণের জন্য এলাকাবাসী বহুবার দাবি তুলেছে। সংশ্লিষ্টরা সেই দাবি বাস্তবায়ন করলে আজ এমন দুর্ঘটনা ঘটতো না।

বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাহিদা আক্তার জানান, উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছে। কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতার কারণে কালিকাপুর, রাজাপুরসহ তিনটি এলাকায় রেলক্রসিংয়ে গেট নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

চট্টগ্রামের বিভাগীয় রেলের ব্যবস্থাপক এবিএম কামরুজ্জামান বলেন, ‘রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, উপজেলা প্রশাসন, এলজিইডি এবং সড়ক ও জনপথের এখনই সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। তাহলে অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে পারাপারে একটা নিরাপদ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারব।’

এ বিভাগের আরো খবর