ত্রিভুজ প্রেমের বলি হলেন শেরপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সুমন মিয়া। সুমন মিয়াকে ৪ নভেম্বর অপহরণ করেন তারই বন্ধু পুলিশপুত্র রবিন। মঙ্গলবার রাতে শেরপুর জেলা শহরের সজবরখিলা মহল্লায় রবিনের বাবা ফোরকান পুলিশের বাসায় মাটিতে পুঁতে রাখা সুমনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সুমন মিয়া শেরপুর সরকারি কলেজের ইন্টারমিডিয়েডের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরপুরের বারাকপাড়া নিমতলার নজরুল ইসলামের ছেলে।
এই হত্যাকাণ্ডে আরেক অভিযুক্ত আন্নি একই কলেজের শিক্ষার্থী। তিনি শ্রীবরদী উপজেলার কাউনেরচরের আজিম মাস্টারের কন্যা। তার সঙ্গে পুলিশ সদস্য ফোরকানের ছেলে রবিনের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে।
জানা যায়, ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ধান্ধায় সুমন মিয়ার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন আন্নি। সুমন এক পর্যায়ে বিয়ের প্রস্তাব দিলে আন্নির সুর পাল্টে যায়। পরে আন্নি তার আসল প্রেমিক রবিনকে ঘটনা জানান। বিষয়টি জটিল হয়ে উঠলে ‘পথের কাঁটা’ সরাতে সুমনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন রবিন ও আন্নি।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ৪ নভেম্বর শহরের বাগরাকসা কাজিবাড়ি পুকুরপাড় এলাকা থেকে সুমনকে রবিন ও অজ্ঞাতদের সহযোগিতায় অপহরণ করেন আন্নি। পরে তাকে খুন করে মরদেহ পুলিশপুত্র রবিনদের সজবরখিলার বাসায় পুঁতে রাখা হয়।
এদিকে সুমন নিখোঁজ হওয়ার পর তার বাবা নজরুল ইসলাম সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনাটি জেনে এগিয়ে আসেন শেরপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। তারা সুমনের বাবাকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলেন।
সুমনের বাবার দায়ের করা অভিযোগটি মামলায় রূপান্তর করা হয়। পুলিশ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে তৎপর হয়ে ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) ভোরে আন্নি ও তার বাবা আজিম মাস্টারকে আটক করে পুলিশ।
তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ময়মনসিংহ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ঘাতক রবিনকে। রবিনের স্বীকারোক্তির তথ্যমতে একই দিন রাত ২টার দিকে রবিনদের বাসায় পুঁতে রাখা সুমনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
সুমনের বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ছেলেকে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে। আমি খুনিদের ফাঁসি চাই।’
সজবরখিলার হাসান বলেন, প্রমের কাহিনি নিয়ে একটা ছেলেকে এভাবে মেরে ফেলে মাটিচাপা দিয়ে দিবে ভাবা যায় না। আমাদের এলাকায় ঘটনাটি হয়েছে। আমরা এর শাস্তি চাই।’
বিপুল বলেন, ‘আমরা এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। খুনি যেই হোক, সব খুনির ফাঁসি চাই। কেউ যেন রেহাই না পায়।’
শেরপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক জিতু বলেন, ‘আমরা ঘটনা জানার পরই দ্রুত পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং আমার পুলিশের কাজে সহায়তা করি। পুলিশও বিষয়টি নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে কাজ করেছে।
‘সুমনকে একেবারে মেরে ফেলা হয়েছে এমনটা আমাদের ভাবনায়ও ছিল না। ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। আমরা দোষীদের শাস্তি দাবি করছি।’
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুবায়দুল আলম বলেন, ‘মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা হত্যার সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য মরদেহ শেরপুর জেলা হাসপাতালে পাঠিয়েছি।’
শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুলিশ পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করেছে। তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপহৃত কলেজছাত্র সুমনের মরদেহ রাতেই উদ্ধার করা হয়েছে।
ঘটনার সঙ্গে আরও কে কে জড়িত, বিস্তারিত তদন্ত সাপেক্ষে বেরিয়ে আসবে। দোষীদের দ্রুত কঠিন শাস্তির মুখে দাঁড় করানো হবে।’