বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে বিশ্বাসী নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘আন্দোলনের নেতারা হয়তো ভাবেন যে দুই-একটা মিছিল করলেই দেশ ঠিক হয়ে যাবে। আর এগুলো হয়তো তাদের গুরুরা শেখান।’
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সোমবার ‘৭ নভেম্বরের আকাঙ্ক্ষা ও আজকের রাজনীতির প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বিগত ১৬ বছর ছিল আওয়ামী লীগের ভয়াবহ দুঃশাসন। ওই দলের নেতাদের কাজ ছিল শেখ মুজিব ও তার পরিবারের গুণগান গাওয়া, অর্থ লুটপাট করা আর তা পাচার করা।’
তিনি বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার করা হয়েছে। এই সরকারের প্রধান কাজ একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।
‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, যে লঙ্কায় যায় সে-ই রাবণ হয়। তারা দীর্ঘদিন, ২০ বছর ক্ষমতায় থাকতে চান। ইতোমধ্যে সরকারের উপদেষ্টা পদে আওয়ামী ঘরনার বিভিন্ন লোক ঢুকে গেছেন।
‘আমাদের সন্তান সমতুল্য ছাত্রদের কর্মকাণ্ড দেখলে মনে হয় যে দেশটা তারাই স্বাধীন করেছেন, আর কেউ জীবন দেননি। বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলের হাজার নেতাকর্মী যে জীবন দিলেন তাদের হিসাব-নিকাশ কে করবে?’
‘শুধু নির্বাচনের জন্য দুই হাজার মানুষ জীবন দেননি’- বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলমের বক্তব্যের সমালোচনা করেন বিএনপির ওই নীতিনির্ধারক।
তিনি বলেন, ‘ভোট কি এতো সোজা? ভোট তো গণতন্ত্রের প্রতীক। ভোটের জন্যই তো ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। ২০২৪-এর লড়াই তো হয়েছে বাক-স্বাধীনতা ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রধান উপাদান।
‘আর এরা বলেন, নির্বাচনের জন্য দেশ স্বাধীন হয়নি। তাহলে কিসের জন্য যুদ্ধ, এতো আত্মত্যাগ? ভোট কি এতই হেলাফেলার বস্তু? অর্থাৎ এরা (বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন) গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে বিশ্বাসী নয়। তারা হয়তো ভাবেন, দুই-একটা মিছিল করলেই দেশ ঠিক হয়ে যাবে। এগুলো এদের গুরুরা হয়তো শেখান।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সংস্কার করে নির্বাচন দিন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দেশ সংস্কার করবেন।
‘ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে সমর্থন করি, ভবিষ্যতেও করব। তবে আপনারা আজীবন ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করবেন না। ১০-২০ বছর ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করবেন না। যারা আওয়ামী লীগের কুশীলব ছিল, ১৬ বছর হালুয়া-রুটি খেয়েছে, সুবিধা নিয়েছে, তারা এখনও বহালতবিয়তে আছে। এদের সরাতে হবে। এটি শুধু অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নয়, রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বও বটে।’