নূর হোসেন দিবসকে কেন্দ্র করে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর জিপিও সংলগ্ন জিরো পয়েন্টে জমায়েত হতে পারেনি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। কারণ জিরো পয়েন্ট ছিল বিএনপি, ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দখলে। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এলাকায় অবস্থান ছিল বিএনপি ও ছাত্রদলের।
তবে এদিন নগরীতে বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের বেশকিছু নেতাকর্মী। এ সময় বেশকিছু নেতাকর্মী মারধরের শিকার হন। বেশ কয়েকজনকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার ঘটনা ঘটে।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয় এলাকা রোববার সকাল থেকে ছিল বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাকর্মীদের দখলে। ছবি: নিউজবাংলা
রোববার বিকেল ৪টার দিকে গুলিস্তান বিআরটিসি বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ব্যানারে শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী বিক্ষোভ শুরু করে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সামনে থেকে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের আরেকটি বিক্ষোভ মিছিল করেন যুবলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের উল্টো পাশের গলি থেকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের একদল নেতাকর্মী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জিরোপয়েন্ট অভিমুখে রওনা হয়। এ সময় বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ধাওয়া ও মারধরের শিকার হন তাদের অনেকে।
রোববার সকাল ৯টার পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন বিএনপি ও ছাত্রদলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এদিকে সকালে রাজধানীর জিরো পয়েন্টে নূর হোসেন চত্বরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছে। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর থেকে জিরো পয়েন্টে অবস্থান না নিলেও বিএনপি ও তাদের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা সেখানে অবস্থান নেয়।
এর আগে শনিবার মধ্যরাতেই জিরো পয়েন্টে ‘ছাত্র-জনতা’ ও ‘গণঅধিকার পরিষদ’ ব্যানারে একদল মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন।
স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় নূর হোসেনকে হত্যার দিনটিতে রোববার ঢাকার জিপিও এলাকার ‘নূর হোসেন চত্বরে’ শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের ঘোষণা অনুযায়ী বিকেল ৩টায় বিক্ষোভ মিছিল করার কথা থাকলেও জিপিও মোড়ে ছাত্র-জনতা এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের উপস্থিতির কারণে তা এক ঘণ্টা পিছিয়ে বিকেল সোয়া ৪টায় নির্ধারণ করেছিল আওয়ামী লীগ।
এদিকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কয়েকজনকে মারধরের ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগের কর্মী সন্দেহে তাদেরকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয় বিএনপি নেতা-কর্মীরা।
মারধরের শিকারদের কেউ কেউ ‘জয় বাংলা’, ‘শেখ হাসিনা দেশে ফিরবেন’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন। ‘শেখ হাসিনা সরকার, বার বার দরকার; ‘একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার; ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু; ‘শেখ শেখ শেখ মুজিব, লও লও লও সালাম’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখে সেখানে অবস্থান নেয়া বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাদেরকে ধাওয়া করেন। ধাওয়ার মুখে তারা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এ সময় বেশ কয়েকজন মারধরের শিকার হন।
এছাড়া রোববার বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে জিরো পয়েন্টে নূর হোসেন চত্বর অভিমুখে রওনা হওয়ার পরই বাধার মুখে পড়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আরেকটি মিছিল।
সড়কে সমবেত হয়ে তারা স্লোগান দিতেই মিছিলটিকে ধাওয়া করে একদল তরুণ-যুবক।