রাজধানীর পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত হত্যাকাণ্ডসহ নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ডের প্রকৃত সত্য বের করতে স্বাধীন কমিশন গঠন প্রশ্নে রুল জারি করে এ সংক্রান্ত আবেদনটি নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেয়।
আগামী ১০ দিনের মধ্যে আবেদন নিষ্পত্তি করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে স্বরাষ্ট্র সচিবকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরবর্তী আদেশের জন্য ২৪ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী তানভীর আহমেদ নিজেই শুনানি করেন। তার সঙ্গে ছিলেন অপর আবেদনকারী বিপ্লব কুমার পোদ্দার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান।
তানভীর আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে সংঘটিত গণহত্যায় মূল পরিকল্পনাকারী ও নেপথ্যে কারা ছিল সে বিষয়ে জাতীয়ভাবে পূর্ণাঙ্গ কোনো তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভুক্তভোগী পরিবার ও তৎকালীন সেনা কর্মকর্তারা ওই ঘটনা নিয়ে নতুন নতুন তথ্য দিচ্ছেন।
‘কেউ কেউ বলেছেন, তদন্তে সরকার তেমন সহায়তা করেনি। এমন প্রেক্ষাপটে জনসমক্ষে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে গণহত্যা তদন্তে জাতীয় স্বাধীন কমিশন গঠনের নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করা হয়। পাশাপাশি শহীদ সেনা দিবস ঘোষণার নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে ৩ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র সচিব (জননিরাপত্তা বিভাগ) বরাবর আবেদন করা হয়।’
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তরে বিদ্রোহের নামে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। সেই লোমহর্ষক ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন প্রাণ হারান। এ ঘটনায় আনা দুই মামলার মধ্যে হত্যাযজ্ঞের মামলার বিচার হাইকোর্ট বিভাগে সম্পন্ন হয়েছে। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলাটি নিম্ন আদালতে বিচারাধীন।
হত্যাযজ্ঞের মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর রায় দেয় বিচারিক আদালত। এতে ১৫২ জনের ফাঁসি এবং ১৬০ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। ১০ বছরসহ বিভিন্ন মেয়াদের সাজা হয় ২৫৬ জনের। খালাস পান ২৭৮ জন।
বিচারিক আদালতে দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি শেষে হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর রায় দেয়। রায়ে ফাঁসি বহাল রাখা হয় ১৩৯ জনের। যাবজ্জীবন দণ্ড দেয়া হয় ১৮৫ জনকে। ২২৮ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়। খালাস পান ৪৫ জন।
উচ্চ আদালতে খালাস পাওয়া ও সাজা কমা ৮৩ জনের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) দায়ের করেছে। পাশাপাশি আসামি পক্ষেও লিভ টু আপিল দায়ের করা হয়েছে।
দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে বৃহত্তম এই মামলায় বাহিনীর সদস্য ছাড়াও রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আসামি করা হয়েছিল। এ মামলায় বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেয়া হয়েছিল। কারাগারে থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। অবশ্য পিন্টুর এই মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে।