বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সিলেটে চোরাচালান বহাল, কেবল সিন্ডিকেটের হাতবদল

  •    
  • ২৬ অক্টোবর, ২০২৪ ২০:০২

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। গত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের যারা চোরাচালান সিন্ডিকেট চালাতেন তারাও এখন অন্তরালে। আর সিন্ডিকেটের সেই ফাঁকা জায়গার দখল নিয়েছেন বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতাকর্মী।

ভারতের সঙ্গে সিলেটের বিস্তীর্ণ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দীর্ঘদিন ধরেই চোরাচালানের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। চিনিসহ বিভিন্ন ভারতীয় পণ্য চোরাইপথে দেশে নিয়ে আসে চোরাকারবারীরা। চোরাচালানের জন্য সিলেটজুড়ে গড়ে উঠেছে একটি সিন্ডিকেট।

এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার সুবাদে তারা সীমান্তের এসব পয়েন্টকে চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য বানিয়ে ফেলেছিলেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। তবে বন্ধ হয়নি সিলেট সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান। কেবল চোরাচালান সিন্ডিকেটের হাতবদল হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের চোরাচালান সিন্ডিকেটে জড়িতরা এখন আত্মেগোপনে। আর সেই জায়গায় বসে এখন বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছেন।

গত ১৩ অক্টোবর সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের সাদিপুরে চোরাই চিনি ভর্তি ট্রাকসহ ছয়জনকে আটক করে পুলিশ। তাদের মধ্যে সিলেট মহানগরের ২৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. সোলেমান হোসেন এবং ২৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মান্নানও ছিলেন। অবশ্য আটকের পর বিএনপি থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।

এর আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর সিলেট সদর উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব রুফিয়ান আহমদের ভাই মো. সুফিয়ানসহ তিনজনকে চোরাচালানের ৫০ বস্তা চিনিসহ আটক করে পুলিশ। পরে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

গত ৩১ আগস্ট ফেসবুকে রুফিয়ান আহমদ লিখেছিলেন, ‘তামাবিল রোডে কেউ চিনির লাইন দিচ্ছেন, আবার কেউ আটকাচ্ছেন। দিন শেষে এক টেবিলে বসে সমঝোতা করে ভাগ-বাটোয়ারা করছেন। ভাই, যা মন চায় করেন; আল্লাহর ওয়াস্তে আমি বিএনপির অমুক, আমি বিএনপির তমুক এসব বইলেন না। আপনারা কী তা আমরা কম-বেশি জানি।

‘আর আরেকটা কথা, অতিরিক্ত সিনিয়রগিরি দেখাইতে আইসেন না। ১৭ বছরের শ্রম-ঘাম আর রক্ত যদি একবার আপনাদের ওপর প্রয়োগ হয়, তখন কিন্তু আর কোনো অপশন থাকবে না।’

রুফিয়ান এমন স্ট্যাটাস দেয়ার এক মাসের মধেই চোরাই চিনিসহ তার ভাই গ্রেপ্তার হন।

এদিকে ৬ অক্টোবর সিলেটে রাস্তায় পুলিশের গাড়ি দেখে দ্রুতগতিতে প্রাইভেট কার নিয়ে পালানোর সময় দাঁড়িয়ে থাকা একটি লেগুনায় ধাক্কা লাগে। পরে প্রাইভেট কারে তল্লাশি চালিয়ে চোরাচালানের ১২ লাখ টাকার ভারতীয় প্রসাধনীসহ যুবদল নেতা ফয়জুল হাসানকে স্থানীয় লোকজন আটক করে পুলিশ সোপর্দ করে। এ ঘটনায় করা মামলায় ফয়জুল হাসানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

কেবল এই কয়েকটি ঘটনা নয়, সিলেটে প্রায় প্রতিদিনই ভারত থেকে চোরাই পথে আসা চিনিসহ বিভিন্ন পণ্য জব্দ করছে পুলিশ। আর এসব চোরাচালানের সঙ্গে উঠে আসছে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাদের নাম।

বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযুক্ত নেতাদের বহিষ্কারসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হলেও ঠেকানো যাচ্ছে না চোরাচালান। অভিযোগ রয়েছে, চোরাচালান হয়ে আসা যে পরিমাণ পণ্য আটক হয় তাদের কয়েক গুণ পণ্য সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে এসে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে।

চোরাকারবারিদের দেয়া তথ্যমতে, ‘ক্ষমতার পালাবদলের পর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে চলে গেছেন। আর সে সুযোগে সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ নেন যুবদল-ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। তাদের নেতৃত্বেই এখন সীমান্ত এলাকা থেকে চোরাই চিনি ট্রাকে করে এনে নিরাপদে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হচ্ছে। বিনিময়ে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতারা মোটা অঙ্কের টাকা নিচ্ছেন।

সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার চিনি আসে। এসব চিনি তামাবিল-জৈন্তাপুর-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক ও ভোলাগঞ্জ-কোম্পানীগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে নগরের পাইকারি বাজার কালীঘাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়।

মধ্যরাত থেকে ভোরের মধ্যে দুটি আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে ট্রাক ও পিকআপে চোরাই চিনি সিলেটে ঢোকে। গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট ও জৈন্তাপুর সীমান্তের চিনি তামাবিল-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট (একাংশ) সীমান্তের চিনি ভোলাগঞ্জ-কোম্পানীগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে সিলেটে আসে।

এসব মহাসড়ক দিয়ে প্রতি ট্রাক চোরাই চিনি পাঁচ থেকে আট হাজার টাকায় পার করিয়ে দিচ্ছে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের কয়েকটি সিন্ডিকেট। এছাড়া জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর, সিলেট নগরের শাহপরান ও আম্বরখানা এবং দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বাইপাস এলাকায় ট্রাক আটকে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মী পরিচয় দিয়ে অনেকে চাঁদা আদায় করছেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পুলিশের কিছুটা নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে নির্বিঘ্নেই তারা এসব করে যাচ্ছেন।

তবে সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘চোরাচালান ঠেকাতে আমরা কঠোর অবস্থান নিয়েছি। যে বা যারা চোরাচালানে জড়িত থাকবে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।’

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ্ সিদ্দিকী বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। দলের নাম ভাঙিয়ে কাউকে অপকর্ম করতে দেয়া হবে না।

‘আমি পুলিশকেও অনুরোধ করব, এমন অভিযোগ পেলে যেন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয়।’

এ বিভাগের আরো খবর