ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার মনোনীত রাষ্ট্রপতির সুর ক্রমাগত একটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনার অনুগামী হয়ে রাষ্ট্রপতি কোনো ধরনের চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন।
সোমবার বিকেলে আশুলিয়ার কাঁইচাবাড়ী এলাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিতে শহীদ ধামসোনা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মামুনের বাড়িতে এক সভায় রিজভী একথা বলেন।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা এ সময় আশুলিয়ায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ ও আহত আরও বেশ কয়েকটি পরিবারের মাঝে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।
এর আগে সাভারের ব্যাংকটাউন এলাকায় শহীদ ইয়ামিনের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন রিজভী। পরে আশুলিয়ার কাঁচাবাড়ীতে শহীদ স্বেচ্ছাসেবক দলনেতার বাড়িতে আয়োজিত এক সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন তিনি।
‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান বকুলের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সাংসদ ও বিএনপি নেতা ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু, রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম, আমরা বিএনপি পরিবার-এর উপদেষ্টা আশরাফ উদ্দিন বকুল, ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান অভিসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘রাজনীতি হচ্ছে মানুষের জন্য, মনুষ্যত্বের বিকাশের জন্য। মানবকল্যাণ, দেশের কল্যাণ, দেশের মানুষের কল্যাণ- শেখ হাসিনা রাজনীতির মনুষত্বের এসব দিক ধ্বংস করে দিয়ে গেছেন।
‘ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিস্টদের রাজনীতি মানেই যুবলীগ-ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাস, মাফিয়াতন্ত্র, টাকা পাচার আর জনগণের টাকা হরিলুট করা।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা রাজনীতির এমন একটি পরিচয় দিয়েছেন যা হলো- ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে লেখাপড়া, বইপত্র, কাগজ-কলম এগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক হচ্ছে একটাই, বেআইনি অস্ত্র। বেআইনি অস্ত্র দিয়ে তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্যাম্পাসে দখলদারত্ব চালিয়েছে।
‘এই নিষ্ঠুর একটি দেশ শেখ হাসিনা তৈরি করেছেন। এই ফ্যাসিস্ট এখন নানাভাবে দেশে ফেরার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তার কোনো অনুশোচনা নেই। তিনি সেখান থেকেই তার ছাত্রলীগ-যুবলীগকে নির্দেশ দিচ্ছেন- তোমরা আক্রমণ করো, মারো। যদি গোপালগঞ্জে কেউ গিয়ে কিছু করে তার হাত পুড়িয়ে দাও।’
শেখ হাসিনার উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘এই মহিলা একটি ভয়ঙ্কর হিংস্র মানসিকতা নিয়ে রাজনীতি করেছেন। আজকে পতনের পরও তার হিংস্রতা, নিষ্ঠুরতার উদগীরণ থামেনি। গণঅভ্যুত্থানে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পরও তার দলের লোকেরা গোপালগঞ্জে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতাকে হত্যা করেছে।’
রাষ্ট্রপতির মন্তব্যের বিষয়ে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘এখন শেখ হাসিনার স্বেচ্ছাচারিতা নেই। কিন্তু বর্তমান রাষ্ট্রপতি তো তারই দেয়া। রাষ্ট্রপতি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ করতেন, যুবলীগ করতেন। তারপরও তিনি রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তাকে কিন্তু কিছু বলা হয়নি বা তার বিষয়ে কেউ কিছু বলেনি।’
রিজভী বলেন, ‘কিন্তু শেখ হাসিনার মনোনীত এই রাষ্ট্রপতির সুর ক্রমাগত একটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হচ্ছে। বলেছেন, উনি শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পাননি। তো আমার কথা হলো- যে স্ত্রী তার স্বামীকে ছেড়ে অন্য লোকের কাছে চলে যায়, সে কি ডিভোর্স লেটার দিয়ে যায়?
‘তেমনই পলাতক নেত্রী পদত্যাগপত্র দিয়ে যায় না- হতে পারে এটা। তবে আমরা জানি, তিনি পদত্যাগপত্র দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি তার দায়িত্ব পালনের চেয়ে যুবলীগের দায়িত্ব পালনে বেশি ইচ্ছুক, ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালনে ইচ্ছুক। প্রথম দিকে ছাত্র-জনতার উত্তাল যে রূপ সে কারণে হয়তো কিছু বলেননি। কিন্তু এখন ক্রমান্বয়ে তিনি শেখ হাসিনার অনুগামী হয়ে কোনো ধরনের চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যারা আত্মত্যাগ করেছেন, তাদের যে শহীদী চেতনা সেই চেতনাকে কলঙ্কিত করা হবে যদি আজকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যর্থ হয়। অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ শেষ করে জনগণের ক্ষমতাকে জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে যে দলই ক্ষমতায় আসুক সেই দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।’
সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা যত বিলম্ব করবেন পরাজিত শক্তির দোসররা ততোই নানাভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে। দেশের মধ্যে এক ধরনের কেওয়াজ ও গণ্ডগোল লাগানোর চেষ্টা করবে। সে বিষয়ে আমাদের সবাইকে সচেতন ও সজাগ থাকতে হবে।’