বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গজারিয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, দীর্ঘ যানজট

  • প্রতিনিধি, গজারিয়া (মুন্সীগঞ্জ)   
  • ১৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:১৪

আন্দোলনকারী লিপি আক্তার বলেন, ‘লাঞ্চ আওয়ারের পরে আমাদের ওয়াশরুমে যেতে দেয়া হয় না। জরুরি প্রয়োজনে অফিস আওয়ারে আমরা বাসায় এক মিনিটও কথা বলতে পারি না। পদোন্নতি, বেতন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দিক দিয়ে শ্রমিকরা বৈষম্যের শিকার। সবকিছু মিলিয়ে আজকের এই আন্দোলন।

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ২১ দফা দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন জেএমআই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা।

আন্দোলনকারীদের শান্ত করতে এসে তোপের মুখে পড়েন কোম্পানিটির কয়েকজন কর্মকর্তা।

শ্রমিকদের এ বিক্ষোভের কারণে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বুধবার সকাল আটটায় কাজে যোগ না দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সামনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন কোম্পানিটির সহস্রাধিক শ্রমিক। ওই সময় কোম্পানির পক্ষ থেকে কয়েকজন আন্দোলনকারীকে শান্ত করার চেষ্টা করলে তাদের ধাওয়া দেন শ্রমিকরা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।

খবর নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন কারণে কোম্পানিটিতে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছিল। এর মধ্যে গত ১০ অক্টোবর কোম্পানি কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে এক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়।

শ্রমিকদের দাবি, সেদিন সরকারি ঘোষণা উপেক্ষা করে বন্ধের দিন কারখানা খোলা রাখা এবং একজন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ছুটি না দিয়ে তার সঙ্গে উল্টো খারাপ আচরণ করা হয়। দীর্ঘসময় অতিবাহিত হওয়ার পরও তাকে হাসপাতালে না নিয়ে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়। অসুস্থ অবস্থায় বিনা চিকিৎসায় মারা যান সেই শ্রমিক। এ ঘটনায় রাগে ফেটে পড়েন শ্রমিকরা। এর পর থেকে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা।

আন্দোলনকারী শ্রমিকদের মধ্যে স্বপন মিয়া বলেন, ‘কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আমাদের সাথে যে আচরণ করে, তা অমানবিক। সরকারি কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করে না তারা।

‘জোর করে শ্রমিকদের ওভারটাইম করতে বাধ্য করা হয়। অসুস্থ হলে হাসপাতালে যেতে দেয়া হয় না। বিভিন্ন কারণে বাধ্য হয়ে ২১ দফা দাবি নিয়ে আমরা মাঠে নেমেছি।’

আরেক আন্দোলনকারী দীপক সরকার বলেন, ‘আমাদের কাজ নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়। বেঁধে দেওয়া সময়ের ভেতরে নির্দিষ্ট পরিমাণ কাজ না করতে পারলে বেতন কেটে দেয়া হয়।

‘সরকারি ছুটি এমনকি ঈদের সময়ও আমরা ছুটি পাই না। এ রকম অমানবিক নিয়ম অন্য কোনো কোম্পানিতে আছে কি না, আমরা জানি না। দীর্ঘদিনের সঞ্চিত ক্ষোভে আজ আমরা বাধ্য হয়ে পথে নেমেছি।’

আন্দোলনকারী লিপি আক্তার বলেন, ‘লাঞ্চ আওয়ারের পরে আমাদের ওয়াশরুমে যেতে দেয়া হয় না। জরুরি প্রয়োজনে অফিস আওয়ারে আমরা বাসায় এক মিনিটও কথা বলতে পারি না।

‘পদোন্নতি, বেতন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দিক দিয়ে শ্রমিকরা বৈষম্যের শিকার। সবকিছু মিলিয়ে আজকের এই আন্দোলন।’

বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘খবর পাওয়ার পরপরই আমরা ঘটনা ফেলে ছুটে আসি। মালিক-শ্রমিক উভয় পক্ষের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছি আমরা।

‘শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরে যাওয়ার দাবি জানিয়ে আমি তাদের আশ্বস্ত করেছি। প্রয়োজন হলে তাদের পক্ষ থেকে আমি মালিকপক্ষের সাথে কথা বলে ন্যায্য দাবিগুলো আদায় করে দেয়ার চেষ্টা করব, কিন্তু তারা আমার কথা শুনছে না।’

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক মাসুম মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি কথা বলার অবস্থায় নেই। আমাদের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা শ্রমিক পক্ষের সাথে কথা বলতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছে। আমরা পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছি।’

এদিকে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনুর আক্তার।

আন্দোলনকারী শ্রমিকদের তিনি মহাসড়ক থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। তাদের ন্যায্য দাবিগুলো পূরণ করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন।

শ্রমিকদের অবরোধের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়া অংশে অন্তত ১০ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয় বলে হাইওয়ে পুলিশ জানায়।

এ বিভাগের আরো খবর