স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় শেরপুরের পাঁচ উপজেলায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
জেলায় ফসল হারিয়ে দিশেহারা কৃষকরা। সরকারি সহযোগিতা ছাড়া ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন তারা।
প্রতি বছর শেরপুর জেলা খাদ্যে উদ্বৃত্ত হলেও এবার খাদ্য ঘাটতি হবে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে শেরপুরের মানুষ। এবারের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সড়ক, বাড়িঘর, প্রাণিসম্পদ ও ফসলি জমি, তবে এখনও পানিবন্দি রয়েছে নিম্নাঞ্চলের অনেক পরিবার।
জেলায় দুর্ভোগে রয়েছেন পানিবন্দি এলাকার মানুষজন। খাদ্য উদ্বৃত্তের এ জেলার কৃষকরা এবার অর্ধেক ফসলও উৎপাদন করতে পারবে না।
অনেক কৃষকের দাবি, তার ঋণ নিয়ে আবাদ করেছেন। এখন সে ঋণ পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
ঝিনাইগাতীর কৃষক আমনচাষি কবির বলেন, ‘ঋণ নিয়ে আবাদ করছি। এহন তো সব শেষ। ঋণই বা কেমনে দিমু আর এ বছর পোলাপান নিয়া চলমু কেমনে।’
ঝুলগাঁওয়ের আমিনুল বলেন, ‘আবাদ তো করছি কর্জ কইরা। এহন পানির বিল কেমনে দিমু? ধান বেইচ্চা দেয়ার কথা আছিল।’
দড়িকালীনগর গ্রামের রমিজ মিয়া বলেন, ‘চড়া সুদে ঋণ নিয়া ৫০ বিঘা জমিতে আবাদ করছিলাম। ৮৮ সালের পর এত ভয়াবহ বন্যা আমরা কখনো দেহি নাই।
‘সব ধান শেষ আমার। এক ছটাক ধান বাড়ি নিয়া যাবার পামু না। আর ঋণ তো এহন বোঝা। কেমনে কী করি, আল্লাহ জানে।’
জেলার প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির সবজির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গরজরিপাড়ের হামিদুল বলেন, ‘অনেক স্বপ্ন নিয়া শিম লাগাইছিলাম। বানের পানি সব শেষ করে দিছে।’
ধার-কর্জের মূলধন সব হারিয়ে দিশেহারা বলে জানান তিনি।
ঝুলগাঁওয়ের সামাদ মিয়া বলেন, ‘লাউ লাগাইছিলাম ৪ কাঠা জমিনে। সব পানির নিচে। আমরা সরকারি সহযোগিতা চাই। তা না হলে আর বাঁচন নাই।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় এবার প্রায় ৯২ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছিল। বন্যায় রোপা-আমন, সবজি ও আধা চাষে ৩২ হাজার ১৫৭ হেক্টর জমির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এবার ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৮৯ হাজার ৮৬ টন চাল। ক্ষতি হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৯১০ টন ধানক্ষেতের। জেলায় সব মিলিয়ে ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, ‘অতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চলতি আমন আবাদের ৪৭ হাজার হেক্টর জমির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর সবজি আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার হেক্টর, তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা। বন্যার পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণ সম্ভব হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এবারের বন্যায় প্রায় দুই লাখ কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে তাদের সার-বীজ দেয়া হবে। এ ছাড়া কৃষকদের প্রণোদনা দেয়ার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে।’