টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুর জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
উজানে পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও ভাটি এলাকায় অন্তত ৫০ গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।
জেলায় ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার অন্তত ১৪টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষ।
বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ায় চরম কষ্টের মধ্যে পড়েছে লোকজন।
বন্যার পানিতে তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তারা হলেন নালিতাবাড়ীর খলিশাকুড়ির খলিলুর রহমান (৬৫), আন্ধারুপাড়ার ইদ্রিস আলী (৬৫) ও ঝিনাইগাতীর সন্ধ্যাকুড়ার এক ব্যক্তি, যার পরিচয় জানা যায়নি।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
এদিকে রাতভর বন্যাদুর্গত এলাকায় আটকে পড়াদের উদ্ধার কাজ করেন সেনাবাহিনী, পুলিশ সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকরা।
বন্যার্ত এলাকায় খাবার সংকট চরমভাবে দেখা দিয়েছে। রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলেও দুর্ভোগ পোহাচ্ছে মানুষ।
ঝিনাইগাতীর জুলগাঁও এলাকার করিম মিয়া বলেন, ‘রাত ১১টার পর আমাদের এলাকায় পানি ঢোকা শুরু করছে। আমাদের এলাকায় আটাশির বন্যার পরে আর পানি ওঠে নাই, কিন্তু এবার পানি।’
জুলগাঁওয়ের রহমত বলেন, ‘শেষ রাইতো উইঠা দেহি ঘরে মধ্যে পানি। সকাল থাইক্কা রান্নাবান্না অয় নাই। ক্ষেতের ধানও শেষ। কী করি যে এহন আল্লাহ জানে।’
মালিঝিকান্দার মরিয়ম বলেন, ‘বাবা গো, এত পানি যে কেমনে আইল। আমরা পাক্কা রাস্তার সাথে থাকি। এনো তো পানি উঠে না। এবার পানি কেমনে উঠল? ঘরে পানি, চুলায় পানি।’
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, এ পর্যন্ত জেলায় সাত হাজার ৭০০ হেক্টর জমির আমন ধান সম্পূর্ণ পানির নিচে। ৯ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির আমন ধানের আবাদ আংশিক পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
‘৬০০ হেক্টর জমির শীতকালীন সবজি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।’
এ ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী থানা পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন বন্যার্তদের মধ্যে রান্না করা ও শুকনা খাবার বিতরণ শুরু করেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ শুরু করা হয়েছে। বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকেও ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ওঠায় আশ্রয়কেন্দ্রেও যেতে পারছেন না স্থানীয় বন্যার্তরা।
শেরপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘এক রাতের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হঠাৎ করে এই বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলাগুলোতে নির্দেশনা দেয়া আছে প্রয়োজনীয়সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র খোলার। উপজেলা প্রশাসনও আগে থেকেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করে রেখেছে।
‘অনেক স্কুল-কলেজও পানির নিচে। ইতোমধ্যে আমরা পাঁচ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার প্রস্তুত করেছি। সেগুলো উপজেলাগুলোতে পাঠিয়ে দেয়া হবে। আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দুর্গত মানুষদের উদ্ধার করা।’