বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ দুই বছর বা তারও কম সময় হওয়া উচিত বলে মনে করেন দেশের ৫৩ শতাংশ ভোটার।
নর্থ সাউথ ইউনির্ভাসিটির সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স (এসআইপিজি) পরিচালিত এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকে নাগরিকদের প্রত্যাশা' শীর্ষক জাতীয় জরিপের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।
জরিপ সম্পর্কে বলা হয়, গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের আটটি বিভাগের ১৭টি জেলায় মোট এক হাজার ৮৬৯ জনের ওপর এই জরিপ চালানো হয়। এটি জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী সর্বপ্রথম সরাসরি পরিচালিত একটি জাতীয় প্রতিনিধিত্বমূলক জরিপ।
জরিপের উত্তরদাতাদের বৃহত্তম অংশ (৬৩ শতাংশ) মধ্যবয়সী, যাদের বয়স ২৮ থেকে ৫০ বছর। ২২ শতাংশ জেনারেশন জেড (১৮-২৭) এবং ১৪ শতাংশের বয়স ৫০ বছরের উপরে। এছাড়া জরিপের উত্তরদাতাদের ৫৪ শতাংশ শহর অঞ্চল এবং ৪৬ শতাংশ গ্রামীণ অঞ্চলের।
জরিপের ফল তুলে ধরে বলা হয়, উত্তরদাতাদের প্রায় ৫৩ শতাংশ মনে করেন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ দুই বছর বা তার কম হওয়া উচিত। আর ৪৭ শতাংশ মনে করেন এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তিন বছর বা তার বেশি সময় ক্ষমতায় থাকতে হবে।
জরিপে উত্তরদাতাদের ৪৬ শতাংশ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে অনিশ্চিত। আর ৫৪ শতাংশ মূলধারার রাজনীতিতে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এছাড়া ৯৬ শতাংশ প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিত করাকে সমর্থন করে। ৪৬ শতাংশ বিশ্বাস করে সংবিধানের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন প্রয়োজন এবং ১৬ শতাংশ সম্পূর্ণ নতুন সংবিধানের পক্ষে তাদের মত জানিয়েছে।
গবেষণার তথ্যে আরও বলা হয়, নাগরিকদের অন্তর্ভুক্ত করা গেলে সরকারের বর্তমান অবস্থান নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বর্তমান সরকারের বন্যা ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করেছেন তারা।
পুলিশ, শিক্ষা ব্যবস্থা, রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কারের ওপর নাগরিকদের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সচিব ড. বদিউল আলম মজুমদার।
তিনি বলেন, ‘মানুষ নির্বাচনি সংস্কার চায়, যাতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের নির্বাচনি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এটিকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব হলো কারিগরি কিছু সুপারিশ করা। আমি যে কমিশনের সঙ্গে যুক্ত সেই কমিশনের কাজ হবে কিভাবে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করা যায়।
‘তার কিছু টেকনিক্যাল সলিউশন আমাদের অভিজ্ঞতার আলোকে, বাইরের অভিজ্ঞতার আলোকে এবং জনগণের সঙ্গে বা বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করে কী কী আইন পরিবর্তন করা দরকার, নির্বাচনি ব্যবস্থার সাথে যেসব প্রতিষ্ঠান জড়িত আছে তাদের কি কি পরিবর্তন দরকার, সাংবিধানিক কী কী সংস্কার দরকার- এগুলো সম্পর্কে আমরা সুপারিশ দিতে পারি।’
বদিউল আলম বলেন, ‘সরকার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসে একটা ঐকমত্যে পৌঁছার চেষ্টা করবে এবং একটি রোডম্যাপ সৃষ্টি হবে ও নির্বাচনের সময়কাল নির্ধারিত হবে।’
জরিপের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে এসআইপিজি’র উপদেষ্টা অধ্যাপক সালাহউদ্দিন এম. আমিনুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।