সারা দেশে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদায়নকে কেন্দ্র করে সচিবালয়ে সংঘটিত বিশৃঙ্খলার ঘটনায় ১৭ জন উপ-সচিবের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ২০১৮ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী তাদের লঘু ও গুরুদণ্ড দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সোমবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসক নিয়োগকে কেন্দ্র করে গত ১০ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেন উপ-সচিব মর্যাদার কর্মকর্তারা। সেদিনের ঘটনায় বিশৃঙ্খলার দায়ে ১৭ জনকে চিহ্নিত করেছে তদন্ত কমিটি।
‘১৭ জন কর্মকর্তার সবাই উপসচিব পদমর্যাদার। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এদের মধ্যে আটজনকে গুরুদণ্ড, চারজনকে লঘুদণ্ড ও পাঁচজনকে তিরস্কার করার সুপারিশ করা হয়েছে।’
তবে সিনিয়র সচিব সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কারও নাম প্রকাশ করেননি। নাম জানার দরকার নেই বলেও এ সময় মন্তব্য করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর দেশের ৫৯ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়। তখন এই পদে নিয়োগ না পেয়ে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে সচিবালয়ে হট্টগোল ও হাতাহাতির মতো ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন একদল কর্মকর্তা।
তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কে এম আলী আযমের কক্ষে গিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। যুগ্ম সচিবের বিরুদ্ধে এককভাবে ডিসি নিয়োগের তালিকা তৈরির অভিযোগও আনেন তারা।
কর্মকর্তারা এ সময় নিজেদের বিএনপি-জামায়াতপন্থী ‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তা হিসেবে উল্লেখ করেন।
উপসচিব পদমর্যদার ওইসব কর্মকর্তার অভিযোগ ছিল- নতুন নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের অধিকাংশই হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগী। আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে এই কর্মকর্তাদের ডিসি নিয়োগ করা হয়েছে। এমন দাবি নিয়ে দিনভর সচিবালয়ে হট্টগোল চলে।
এ নিয়ে সিনিয়র সচিব মুখলেস উর রহমান বলেন, ‘সচিবালয়ে অসন্তোষের ঘটনায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকেও সাক্ষ্য-প্রমাণ ও প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। ওই ঘটনায় তদন্ত কমিটি ১৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।’
তিনি জানান, তদন্ত কমিটি তিন ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে। তাদের মধ্যে আটজনের বিষয় বলা হয়েছে, তদন্তসাপেক্ষে কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করে গুরুদণ্ড দেয়া যেতে পারে।
চারজনের বিষয়ে বলা হয়েছে, তদন্তসাপেক্ষে বিধি-বিধান অনুযায়ী লঘুদণ্ড দেয়া যেতে পারে। আর পাঁচজনের ব্যাপারে বলা হয়েছে, তাদের শাস্তি তিরস্কার দেয়া যেতে পারে। তবে ভবিষ্যতে যাতে এটি না করে সে ব্যাপারে তাদেরকে সাবধান করতে হবে।
তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে সচিব মুখলেস উর রহমান বলেন, ‘ডিসি হতে না পারায় মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আন্দোলনের বিষয়টি কেউ ভালোভাবে নেয়নি। প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে বলেছেন অনেকে। শৃঙ্খলা রক্ষার্থে যা যা করণীয় সে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের কারও বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘একজন যুগ্ম সচিব ছিলেন। তাকে সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার করে বদলি করা হয়েছে।’