বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার চেয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, ‘দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। মামলা প্রত্যাহার করে দেশে গণতন্ত্র সংহত করার দাবি জানাচ্ছি। কোনোরকম টালবাহানা আমরা সহ্য করব না।’
শুক্রবার বিকেলে গাজীপুরের কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ. স. ম হান্নান শাহ্'র অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে পার্লামেন্ট তৈরি করতে হবে। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার হলে তখনই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
সেই গণতান্ত্রিক সরকার দেশ শাসন করবে।’
তিনি বলেন, ‘সংস্কার আমরাও চাই। দুই বছর আগে আমরা ৩১ দফা প্রস্তাব দিয়েছি। সংস্কারের জন্য যৌক্তিক সময় আমরা দেব। তবে যত দ্রুত নির্বাচন করা যাবে ততই দেশের জন্য কল্যাণকর হবে। দ্রুত সংস্কার করে নির্বাচিত পার্লামেন্টের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। বৈষম্যহীন বাঙালি দেখতে চাই। সন্তানহারা পিতা-মাতার কষ্ট আর দেখতে চাই না।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচনের নামে প্রহসন করে নিজেদের প্রার্থীকে জেতানোর জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করেছে। তারা পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করেছে। ক্ষমতা ধরে রাখতে প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, সবকিছু ব্যবহার করেছে। দুর্নীতির নজিরবিহীন করেছে।
‘শেখ হাসিনা বলেছিলেন- আমি শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে, পালাতে জানি না। তিনিই আবার ছাত্র আন্দোলনের মুখে হেলিকপ্টার দিয়ে গণভবন থেকে পালিয়েছেন।’
ফখরুল বলেন, ‘গত ১৭ বছরে বিএনপির প্রায় এক হাজার লোককে গুম-হত্যা করা হয়েছে। ৬০ লাখ মানুষের ওপর মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। তাদের অত্যাচারে বিএনপি নেতাকর্মীরা নিজ বাড়িতে ঘুমাতে পারতেন না।’
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ এখনও নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দুর্গাপূজা আসছে। এই পূজাকে কেন্দ্র করে তারা দেশে নৈরাজ্য ও অশান্তি তৈরি করতে পারে। সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।’
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা সবসময় আপনাদের পাশে আছি। বাংলাদেশের সব মানুষ আপনাদের পাশে দাঁড়াবে এবং আপনাদের পূজায় যেন কোনো ক্ষতি না হয় সে ব্যাপারে আমরা সবাই সচেষ্ট থাকব।’
স্মরণ সভায় মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আ স ম হান্নান শাহ্ মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে মারা গেছেন। হান্নান শাহ্'র সঙ্গে আমার একটা স্মৃতি আছে। তিনি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক মানুষ ছিলেন। যদিও তার গায়ে থাকতো সেনাবাহিনীর পোশাক। হান্নান শাহ’র পুত্র শাহ্ রিয়াজুল হান্নান একজন যোগ্য মানুষ। আপনারা তাকে সমর্থন দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।’
হান্নান শাহ্ স্মৃতি সংসদের আয়োজনে এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি একেএম ফজলুল হক মিলন।
কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব খন্দকার আজিজুর রহমান পেরার পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহ্ রিয়াজুল হান্নান রিয়াজ, কেন্দ্রীয় বিএনপির সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ও মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কামরুজ্জামান রতন, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটু, ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ূন কবীর খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য মজিবুর রহমান, ওমর ফারুক শাফিন, গাজীপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শওকত হোসেন সরকার, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা শেফাউল হক, জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসী, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ইমরান হোসেন শিশির, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক ফরিদুল আলম বুলু, সদস্য সচিব জুনায়েদ হোসেন লিয়নসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এর আগে উপজেলার ঘাগটিয়ায় আ. স. ম হান্নান শাহর নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় তার কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও কবরে ফাতেহা পাঠ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সভার শুরুতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, হান্নান শাহ, তার সহধর্মিণী নাহিদ হান্নানসহ প্রয়াত নেতাকর্মীদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন মাওলানা আব্দুস সাত্তার।