আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশের প্রকৃত সংস্কার ও নির্বাচন অসম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের উল্লেখ করা সময়টা প্রত্যাশার তুলনায় অনেক বেশি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরবেন কি না বা ফিরলেও কবে ফিরবেন সেটা তার নিজের সিদ্ধান্তের বিষয় বলেও উল্লেখ করেন জয়।
মঙ্গলবার রাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জয় এসব কথা বলেন।
নির্বাচন নিয়ে সেনাপ্রধানের বক্তব্যের উল্লেখ করে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘তিনি যে সময়সীমার উল্লেখ করেছেন তা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। তারপরও অন্তত একটা সময়সীমা উল্লেখ করাটা স্বস্তির।
‘আমি খুশি যে আমাদের সামনে এখন প্রত্যাশিত একটি সময়সীমা আছে। তবে আমরা এই নাটক আগেও দেখেছি- যেখানে একটি অসাংবিধানিক, অনির্বাচিত সরকার সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তারপর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এখনও তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন।
এর আগে সোমবার রয়টার্সে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে দেশের পরিস্থিতি ও আগামী নির্বাচন সংক্রন্ত প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, বাংলাদেশে দেড় বছরের মধ্যেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণ হওয়া উচিত। তবে ‘পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন’ তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাবেন।
রয়টার্স এরপর মঙ্গলবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে সাক্ষাৎকার নেয় জয়ের। জয়কে প্রশ্ন করা হয়, তার মা ভারত থেকে কবে দেশে ফিরতে পারেন।
জবাবে জয় বলেন, ‘সেটা তার (শেখ হাসিনা) ওপরই নির্ভর করছে। এই মুহূর্তে আমি আমার দলের লোকদের নিরাপদ রাখতে চাই। তাই আমি এই ইউনূস সরকার তাদের ওপর যে নৃশংসতা চালাচ্ছে, সে বিষয় সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সচেতনতা বাড়াতে চাই।’
অবশ্য এর আগে ৯ আগস্ট জয় জানিয়েছিলেন, তার মা দেশে ফিরে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে লড়াই করতে চায়।
তিনি বলেছিলেন, ‘আপাতত তিনি (হাসিনা) ভারতে আছেন। অন্তর্বর্তী সরকার যখনই সিদ্ধান্ত নেবে, তখনই তিনি বাংলাদেশে ফিরে যাবেন।’
৭৬ বছর বয়সী শেখ হাসিনা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কি না তা তিনি স্পষ্ট করে বলেননি। তিনি বলেছেন, ‘আমার মা বর্তমান মেয়াদের পর রাজনীতি থেকে অবসর নিতেন।’
রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ জয় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ঠিক আগে পাকিস্তানের জান্তা সরকারের কর্মকাণ্ডের উদাহরণ দেন। পাশাপাশি নিকট অতীতে, ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথাও তিনি উল্লেখ করেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের আগে এই অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় ছিল।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এই সরকার নির্বাচনের আগে বিচার বিভাগ, পুলিশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করেনি।
বুধবার প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গঠিত ছয়টি সংস্কার প্যানেলের সুপারিশ পাওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে অন্তর্বর্তী সরকার। সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য হলে এবং ভোটার তালিকা প্রস্তুত হলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে।