বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জনগণের সমর্থনে সরকার গঠনে সক্ষম হবে বিএনপি: তারেক রহমান

  • প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ   
  • ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ২০:৫১

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘জনতার আত্মত্যাগের বিনিময়ে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারা জনগণের রাজনৈতিক যে প্রত্যাশা, রাজনৈতিক যে অধিকার, তা যাতে সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় সে পদক্ষেপ নেবে। খেয়াল রাখতে হবে- জনগণের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার কাজ করতে গিয়ে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব যেন না হয়, যাতে স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা ফের ষড়যন্ত্র করার সুযোগ পায়।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ আজ প্রত্যাশা করছে, তাদের প্রিয় দল বিএনপি জনগণের সমর্থন নিয়ে আগামীতে সরকার গঠন করতে সক্ষম

হবে। মানুষের প্রত্যাশার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে কাজ করবে বিএনপি।

সোমবার বিকেলে কিশোরগঞ্জ পুরাতন স্টেডিয়ামে জেলা বিএনপি আয়োজিত বিশাল গণসমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা একটি পর্যায় অতিক্রম করে এসেছি। যে পর্যায়টা ছিল স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে দেশের মানুষকে মুক্ত করা। স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছে।

‘স্বৈরাচারের পতন হয়েছে বলেই সব বিপদ কেটে যায়নি। এখনও সামনে বিপদ আছে। আমাদেরকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। পাশাপাশি আমাদেরকে দেশ গড়ে তুলতে হবে। দেশকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। দেশকে সামনে নিয়ে যেতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হবে একটি সম্ভাবনাময় দেশ, একটি সম্ভাবনাময় জাতি হিসেবে। শুধু রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা হলেই সব কিছু হয়ে যায় না। রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন, রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি আমাদেরকে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামেও জয়ী হতে হবে। তাহলেই আমরা আমাদের আন্দোলনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব।’

বিএনপির এই দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা বলেন, ‘শহীদ পরিবারের সদস্যদের সম্মান জানানোর জন্য আজ আমরা একত্রিত হয়েছি। এই শঙ্কামুক্ত পরিবেশে আমরা একত্রিত হয়েছি। এই সময়টার জন্য বিগত ১৭ বছর এ দেশের মানুষকে অপেক্ষা করতে হয়েছে, আত্মত্যাগ করতে হয়েছে, সংগ্রাম করতে হয়েছে, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হয়েছে।

‘এই কিশোরগঞ্জ জেলাতেই আমরা ১৭ জন মানুষকে হারিয়েছি, যারা আত্মত্যাগ করেছেন এদেশের মানুষের অধিকারের জন্য। ১৬ জন শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন- যারা ভয় পাননি, পিছিয়ে যাননি মানুষের অধিকারের কথা বলতে গিয়ে।’

তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশে এরকম হাজারও মানুষ আছেন, হাজারও শহীদ ও তাদের পরিবার আছেন, যারা আত্মত্যাগ করেছেন বিগত ১৭ বছরে। বিশেষ করে বিগত জুলাই-আগস্ট মাসে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে শুধু ঢাকা শহরেই। এর বাইরে বহু মানুষ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। শুধু বিএনপিরই ৬০ লাখের মতো নেতাকর্মী নির্যাতিত হয়েছেন, অত্যাচারিত হয়েছেন। এর বাইরে আরও রাজনৈতিক দল আছে, যাদের সদস্যরা বিএনপির নেতাকর্মীদের মতো অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।’

প্রশ্ন রেখে তারেক রহমান বলেন, ‘এই যে এত মানুষ আত্মত্যাগ করেছেন, এত মানুষ নির্যাতিত হয়েছেন, কেন এই মানুষগুলো আত্মত্যাগ করেছেন? কেন নির্যাতিত হয়েছেন?

‘কারণ একটাই, এই মানুষগুলো বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে চেয়েছিল। আমরা যে আজ মুক্ত পরিবেশে কথা বলতে পারছি, এরকম একটি মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে চেয়েছিল এই মানুষগুলো।’

তিনি বলেন, ‘একাত্তর সালে লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে আমরা আবারও এ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে স্বৈরাচারকে বিদায় করতে সক্ষম হয়েছি জনগণের সংগ্রামের মাধ্যমে, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘এই যে আত্মত্যাগ, এই যে বিসর্জন এটিকে আমাদের ধরে রাখতে হবে। এদের মূল্য আমাদেরকে দিতে হবে। আজকে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ একটি নতুন প্রত্যাশা নিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা তাদের রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে পারবে- সেই বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হবে।’

স্বৈরাচারের পতন হওয়ার পরও তাদের প্রেতাত্মারা এখনও রয়ে গেছে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা বার বার বলেছি, আবারও বলছি- জনতার আত্মত্যাগের বিনিময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সরকার জনগণের রাজনৈতিক যে প্রত্যাশা, রাজনৈতিক যে অধিকার, যার জন্য বিগত ১৭ বছর ধরে মানুষ সংগ্রাম করেছে, সেই অধিকার যাতে সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় সে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

‘তাদেরকে এটিও সতর্কভাবে খেয়াল রাখতে হবে- জনগণের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার কাজ করতে গিয়ে এমন কোনও পরিস্থিতির উদ্ভব যেন না হয়, যাতে করে স্বৈরাচার আবার কোনো ষড়যন্ত্র করার সুযোগ পায়। স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা সুযোগ পেলে তাদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখবে।’

গণতন্ত্রের পক্ষের সব রাজনৈতিক দল ও প্রতিটি মানুষকে সতর্ক থাকার এবং একইভাবে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করারও আহ্বান জানান তিনি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশ যেমন একটি সম্ভাবনাময় দেশ, একইভাবে আমি

বিশ্বাস করি দেশের প্রতিটি জেলা সম্ভাবনাময় এলাকা। কিশোরগঞ্জকে একটি সম্ভাবনাময় জেলা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বোরো মৌসুমে এখানে প্রচুর ধান হয়। এখানকার হাওরে যে ধান উৎপন্ন হয়, সেটা সমগ্র বাংলাদেশের মোট উৎপাদনের ১৬ শতাংশ। সঠিক পরিকল্পনা নিলে, কৃষকদেরকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করতে পারলে এটা ২০ থেকে ২৫ শতাংশে উন্নীত করতে সক্ষম হবো।

‘রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সঠিক সহযোগিতা করা গেলে এই এলাকার বিশাল হাওরাঞ্চলে উৎপাদিত মাছ রপ্তানি করেও বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে পরিচিত করতে পারব।’

সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, স্বৈরাচারের পতন হয়েছে, কিন্তু জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি এখনও। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে। দলকে শক্তিশালী করতে হবে। সুশৃঙ্খল থাকতে হবে। এতদিন যেমন একটি আদর্শকে সামনে রেখে আন্দোলন করেছি, সামনেও আমাদেরকে সেই আদর্শ সমুন্নত রাখতে হবে।’

কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ ওয়ারেস আলী, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত।

আরও বক্তব্য দেন- কিশোরগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রুহুল আমিন আকিল, ইসমাইল হোসেন, অ্যাডভোকেট শরীফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসরাইল মিয়া, আমিনুল ইসলাম আশফাক প্রমুখ।

সমাবেশে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারের কয়েকজন সদস্যও বক্তব্য দেন।

সমাবেশ সঞ্চালনা করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পদক মাজহারুল ইসলাম।

এ বিভাগের আরো খবর